বিভাস কৃষ্ণ চৌধুরী ॥
অনিয়ম এখন নিয়মে পরিনত হচ্ছে। টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। আর নির্মাণে যত্রতত্র নির্মাণ সামগ্রী রাখায় পৌর নাগরিকদের চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী। শহরের প্রধান সড়কে ধীর গতিতে চলছে উন্নয়ন কাজ। ফলে বেশির ভাগ মানুষের চলাচল বিভিন্ন অলিগলি হয়ে। আর অলিগলি প্রায় রাস্তাই এখন নির্মাণ সামগ্রীর দখলে। দিনবদলের সাথে সাথে আবাসন ব্যবস্থাও উন্নত হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে মানুষের কর্মব্যস্ততা। যত্রতত্র নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখায় যানজট-দুর্ঘটনাসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র ইট-পাথর-বালু ফেলে রাখছেন ভবন মালিকরা। পৌর আইন অনুযায়ী রাস্তায় ইট, বালু ও পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী রাখা বেআইনি। কিন্তু তারপরও এ বিধান কেউ মানছেন না। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলে আসলেও টাঙ্গাইল পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো জোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল পৌর শহরের জেলা সদর রোড, ছোট কালিবাড়ী, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজের পেছনের এলাকা, থানা পাড়া, শান্তিকুঞ্জ মোড় হতে এতিমখানা রোড, বাজিতপুর রোডসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের কাজে ইট, বালু ও পাথর রাস্তার ওপর মজুদ করে রেখেছে। ফলে ওই রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ওই সব নির্মাণ সামগ্রীর কারণে পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের ফুটপাতটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নির্মাণাধীন ভবনের মালিক ও বিভিন্ন ডেভোলপার কোম্পানির লোকজন রাস্তা বন্ধ করে নির্মাণ সামগ্রী মজুদ করে রেখেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ সামগ্রী রেখে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। শুধু তাই নয়, মাঝে-মধ্যে এ কারণে ফাঁকা রাস্তায় প্রায়ই যানজট লেগেই থাকে। এরপরও নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। আগে কম থাকলেও বর্তমান সময়ে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী বেশি রাখা হচ্ছে। ব্যবস্থা না নেয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। পৌর শহরের বাসিন্দা অনিক রহমান, মঞ্জু সরকারসহ আরো অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন কাজে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। ইদানিং শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ভবন নির্মাণ সামগ্রী রেখে রাস্তা ছোট করে ফেলেছে। আর এই সকল সামগ্রী রাখার কারনে রাস্তার বেশির ভাগ অংশে বালু ও পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এরমধ্য দিয়ে যানবাহন চালাতে অনেক ভয় লাগে। মাঝে মধ্যেই বালু ও পাথরের কারনে অনেকেই পড়ে ব্যাথা পেয়েছেন।
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক জামান, আলমগীর, রেফাজ ও সিদ্দিক হোসেন বলেন, কাগমারী থেকে শান্তিকুঞ্জ মোড় হয়ে মেইন রোড ও ভিক্টোরিয়া রোড সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। এদিকে রিক্সা বা অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ। বাধ্য হয়েই শহরের বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাই। রাস্তায় দীর্ঘদিন ধরে ইট, বালু ও পাথর রাখার কারনে চলাচলে অনেক সমস্যা হয়। মাঝে মধ্যে যানজটও তৈরি হয়। আর এসব রাস্তায় প্রচুর ধুলাবালি। সময়ও নষ্ট হয় অনেক।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো 'পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন টাঙ্গাইল'। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই টাঙ্গাইল শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে কাজ করছি। পৌর নাগরিকদের বারবার মাইকিং করে সর্তক করা হয়েছে। রাস্তায় রাখা ইট, বালু, রডসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী তুলে এনেছি। পৌরবাসী যদি নিজের শহর পরিছন্ন রাখতে সহযোগিতা না করেন তবে আইন করে তা সম্ভব নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি পৌর নাগরিকদের সচেতন করে যাতে এ শহরটাকে পরিস্কার-পরিছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা যায়।