
সাদ্দাম ইমন ॥
টাঙ্গাইল শহরের অধিকাংশ সড়কগুলোর পাশে ফুটপাতে যেন পা ফেলার জায়গা নেই। নানাভাবে এগুলো দখল হয়ে গেছে। ফুটপাত দিয়ে চলা মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম অস্বস্তিতে। টাঙ্গাইল পৌরসভার উদাসীনতায় ফুটপাতে হকাররা দখলে নিয়ে নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাতে হকার বসিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্ররা। অপরদিকে শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে অবস্থিত ক্যাপসুল মার্কেটের পার্কিং জোনে ফুসকা, চটপটির অস্থায়ী দোকান বসিয়েছে। এতে করে প্রধান সড়কের পার্কিং জোন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সকল প্রকার যানবাহন সড়কের উপর এলোমেলোভাবে রাখায় প্রতিনিয়তই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা যায়, শহরের প্রায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর সব ফুটপাত হকারদের দখলে। হকারদের কারণে ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ, শিক্ষার্থী, নারী ও শিশুরা। চলতে গেলেই সব সময় বিপাকে পড়তে হয় তাঁদের। ফুটপাত আর রাস্তার একাংশ দখল করে, অর্থাৎ হাঁটার অধিকারকে তোয়াক্কা না করে হকারদের ব্যবসা করাটা সবার গা সওয়া হয়ে গেছে। মুখে না বললেও প্রশাসনের বিভিন্নস্তর থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকেরা কার্যত এটি মেনেও নিয়েছেন।
সুশীল সমাজের অভিমত, ফুটপাতে হকারদের বেপরোয়া আচরণজনিত এই বিশৃঙ্খল অবস্থা টাঙ্গাইল পৌরসভার চরম উদাসীনার সৃষ্টি। গত এক বছর ধরে এ অবস্থা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশ্ন ওঠে, এই হকাররা সবার চোখের সামনে এতো দুঃসাহসী হয়ে উঠছেন কী করে? বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পথচারীদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে টাঙ্গাইল পৌরসভা ও প্রশাসনের এতো অনীহা কেন? তাহলে সাধারণ নাগরিকেরা কি তাঁদের কাছে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক? হকার উচ্ছেদের প্রসঙ্গ এলে অনেকে গরিব মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্নটি সামনে নিয়ে আসেন। তাঁরা ভুলে যান ফুটপাত হাঁটার জন্য। তাঁরা ভুলে যান এটি দখল করে কেউ রুটি-রুজির সংস্থান করতে বসলে তার বিরোধিতা করাই বিধেয়। শহরবাসী হকারমুক্ত ফুটপাতে হাঁটার অধিকার চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তাঁদের এই চাওয়াকে ‘গরিবের রুটি-রুজির বিরোধিতা’ হিসাবে দাঁড় করানোর চেষ্টাটিই ‘রাজনীতি’। গরিবের কথা বলেই তাদের কাছ থেকেই চাঁদা তোলা হচ্ছে। যে যেভাবে পারছেন, এই গরিবের কথা বলেই তাদের পকেট কেটে টাকা নিচ্ছে প্রতি মাসে মাসে। এক ফুটপাত বানিজ্য করেই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
তবে এটাও ঠিক দরিদ্র মানুষের জীবিকা অর্জনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। কিন্তু রাস্তা বা ফুটপাত দখল করে সেই জীবিকা নিশ্চিত করা অনুমোদন কতটা যুক্তিযুক্ত। গরিবের জীবিকার অধিকারকে স্বীকার করা আর যথেচ্ছাচার মেনে নেওয়া এক কথা নয়। ফুটপাতের ওপর হকারের অধিকার যদি মানতে হয়, তাহলে যুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি ফুটপাতের প্রতিটি ইঞ্চির ওপরই সেই অধিকার মেনে নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে একজন হকারও ফুটপাতে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতে চাইবেন, ততক্ষণ তাঁকে সে জায়গাটি ছেড়ে দিতে হবে। সেই দাবি যদি না মানা হয়, তাহলে ফুটপাতের ওপর কারও দাবি মানারই প্রশ্ন আসে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ভিক্টোরিয়া রোড, মেইন রোড, কালিবাড়ি রোড, আদালত রোড, জগলু রোড, পার্কবাজার রোড, ডিস্ট্রিক রোড, মসজিদ রোড, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড রোড, নতুন বাসস্ট্যান্ড রোড, সদর হাসপাতাল রোড, বেবিস্ট্যান্ড রোড, কলেজ পাড়া রোডসহ শহরের অন্যান্য রোডগুলোর ফুটপাতের এক ইঞ্চিও খালি নেই। সর্বত্রই হকারদের দখলে। এই বিশাল দখলদারিত্বকে ঘিরে সক্রিয় চিহ্নিত চাঁদাবাজচক্র। যারা ফুটপাতের হকারদের কাছে থেকে চাঁদা তুলছেন। হকাররা জানায়, মাগনা মাগনি এখানে বসি নাই। পৌরসভার অনুমতি নিয়েই সড়কের পাশে ব্যবসা করছি। এজন্য সপ্তাহ ও মাস শেষে নির্ধারিত লোকদের টাকা দিতে হয়। যে যত বেশি টাকা দিতে পারবে, তারজন্য সুন্দর জায়গা বরাদ্দ থাকে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলার জন্য বিশেষ লোক নিয়োজিত আছে। তারা ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন। এরা সবাই চিহ্নিত, কিন্তু তাঁদের ব্যাপারে প্রশাসনকে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। হকাররা আরও জানায়, ব্যস্ত এলাকা ভিক্টোরিয়া রোড ও ক্যাপসুল মার্কেটের ফুটপাত দখলে রাখার জন্য চাঁদার হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ এখানে বিক্রি বেশি। চাঁদা না দিলে পৌরসভার লোকজন এসে ফুটপাতের দখল নিতে দেয় না বলে জানান হকাররা। এছাড়া গরিবদের কথা বলে এসব হকারদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা চুশে খাচ্ছে প্রভাবশালী বড়লোকরাই।
এদিকে, সবগুলো রাস্তা দখল করে চুটিয়ে ব্যবসা করছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি মার্কেটের সামনে দোকানের মালামাল। হাঁটার মতো কোনো জায়গা খালি নেই। সড়কে ফুটপাত বলে কিছু নেই। ফুটপাত মূলত পথচারীদের জন্য। ফুটপাতে কোন ধরণের দোকানপাট থাকতে পারে না। পৌরসভাকে ফুটপাতে জেঁকে বসা হকারদের অন্যত্র ব্যবসা বাণিজ্য চালানোর বন্দোবস্ত করে দিয়ে ফুটপাত নির্ভেজাল সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি শুধু শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে জড়িত নয়, বরং যানজট সমস্যা নিরসনেও গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। তারপর আবারও তারা বসে পড়ে। দ্রুতই ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।