হাসান সিকদার ॥
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে আখের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। কৃষকরা এই আখ থেকেই তৈরি করছেন গুড়। জমির পাশে অস্থায়ী কারখানা স্থাপন করে তৈরি করা হচ্ছে আখের গুড়। আখ ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
নাগরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, নাগরপুর উপজেলায় ৯৭০ হেক্টর জমিতে সারাবছর আখের চাষ হয়। আখ থেকে তিন’শ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হয়। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের কৃষকরা সারাবছর চাষ করেন আখ। এই আখ থেকেই মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করে রস সংগ্রহ করা হয়। সেই রস জ¦াল দিয়ে তৈরি করা হয় গুড়। এখন গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাগরপুরের আখ চাষিরা। জমি থেকে আখ কেটে আনার পর কৃষকরা পাতা ও আগা বাদ দিয়ে শুধু আখ বের করে আলাদা করে ফেলেন। পাতা ও আগার অংশটুকু গৃহপালিত পশু গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করে বের করা রস লোহার কড়াইয়ে দুই থেকে তিন ঘন্টা রস জ্বাল করা হয়। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখার পর শক্ত হয়। শক্ত গুড় গুলোকে একটি নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি করা হয় আখের রস থেকে গুড়।
আখ চাষিরা জানান, প্রতি কেজি গুড় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করা হয়। এক একর জমিতে আখ চাষ করে প্রায় ৪০ মণ গুড় তৈরি করা যায়। এখানকার গুড় নির্ভেজাল ও খাঁটি হওয়ায় চাহিদা রয়েছে প্রচুর স্থানীয় বাজারে। চাষে খরচ কম ও তুলনামূলক লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের ফলন ভালো হয়েছে। তবে কৃষি অফিস আরও বেশি সহযোগিতা করলে এ উপজেলায় আখ ও গুড়ের উৎপাদন বাড়বে। নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা গ্রামের আখ চাষি বাবুল দেওয়ান জানান, তিনি ২ একর জমিতে আখ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। তিনি তার চাষ করা আখ থেকে গুড় তৈরি করে চার লাখ টাকার উপরে বিক্রি করেছেন। একই এলাকার আখ চাষি জাকির দেওয়ান জানান, অন্য ফসলের চেয়ে আখ আবাদ করা এবং তা গুড় বানিয়ে বিক্রি করা অনেক সহজ ও লাভজনক। আখ থেকে গুড় তৈরি করতে তাদের কারিগরের সহায়তা নিতে হয়। এতে তাদের লাভ কমে যায়। সরকারিভাবে যদি তাদের গুড় তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তবে তারা আরো বেশি লাভবান হবেন।
আরেক আখ চাষি আওয়াল মিয়া বলেন, তারা গুড় তৈরিতে কোন প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করেন না। তাদের উৎপাদিত গুড় সম্পূর্ণ ভেজাল মুক্ত। পাইকাররা তাদের অস্থায়ী কারখানা থেকেই গুড় কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন হাট-বাজরে বিক্রির জন্য। আখ চাষ করে তিনি এখন লাভবান হয়েছেন। আখ চাষ করে ভালোভাবে তার সংসার চলছে। আখ কাটা শেষ হলে আরও বেশি জমিতে আখ চাষ করবেন। আখ চাষে খরচ কম ও লাভ বেশি হয়। সরকারিভাবে যদি তাদের সহযোগিতা করা হয় তাহলে তারা আরো বেশি লাভবান হবেন। গায়হাটা গ্রামের বাসিন্দা নাঈম হোসেন জানান, প্রতিবছর তিনি গুড় কিনে নিয়ে যান। সুস্বাদু এই গুড় তার বাড়ির সবাই অনেক পছন্দ করেন। বিভিন্ন পিঠার সাথে গুড় খেতে অনেক ভালো লাগে।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হুসাইন বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে আখের ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়াও গুড়ের উৎপাদনটা ভালো হচ্ছে। কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগ ভবিষ্যতে উপজেলায় আখের আবাদ আরও বৃদ্ধি করবো। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।