টাঙ্গাইলে সাত মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে ২৬ জনের মৃত্যু

কালিহাতী টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল মির্জাপুর লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা রেল লাইনের টাঙ্গাইল অংশে গত সাত মাসে ট্রেনে কাটা পড়ে নারী ও শিশু সহ ২৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সচেতনতার অভাব ও বেখেয়ালীপনার কারণেই ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর মূল কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রেল লাইনের টাঙ্গাইল অংশে গত সাত মাসে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ২০২৩ সালের আগস্টে চার জন, সেপ্টম্বরে দুইজন, অক্টোবরে চার জন, নভেম্বরে একজন, ডিসেম্বরে তিন জন এবং চলতি বছরে জানুয়ারিতে ছয় জন ও ফেব্রুয়ারি মাসে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দুইজন পুরুষের পরিচয় পাওয়া যায়নি এবং চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে নিহতদের মধ্যে তিন জন পুরুষের পরিচয় মেলেনি।

রেললাইন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা রেল লাইনে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশন পর্যন্ত রেল সড়কে কালিহাতী উপজেলার জোকার চর, সল্লা, হাতিয়া, আনালিয়াবাড়ী, ধলাটেঙ্গর, ভাবলা, রাজাবাড়ী, পৌলি এবং বাসাইল উপজেলার গুল্যা, কাশিল ইত্যাদি এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনা বেশি।

কালিহাতী উপজেলার অংশে মহাসড়ক ও রেল পথ পাশাপাশি হওয়ায় সড়ক পথে বিকল গাড়ি মেরামতকালে যাত্রীরা হাটতে গিয়ে রেল লাইনে উঠে পড়ে। মাঠে কাজ শেষে ফেরার পথে রেল লাইন পাড় হতে গিয়ে কাটা পড়ে। এছাড়া যাতায়াতকালে রেল লাইন পাড় হওয়ার সময়ও টেনে কাটা পড়ার ঘটনা ঘটে থাকে।

গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার, সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য মোর্শেদা আক্তার ডলি, ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য সুলতান ফকির সহ অনেকেই জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু রেল স্টেশন থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা রেল স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনে কাটা পড়ার জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ধরা হয়। পথচারীদের রেল লাইন পারাপার ছাড়াও বিকল যানবাহনের চালকসহ যাত্রীরাও এ এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়।

তারা জানান, সাধারণত সচেতনতার অভাব, অসাবধানতা ও বেখেয়ালী চলাচলের কারণে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু পথচারীদের সচেতন করতে রেলওয়ে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়না।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে ২-৩টি সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করতে পারে। এছাড়া রেলস্টেশন, রেলগেট সংলগ্ন ও বাজার, মসজিদ, স্কুলে সচেতনামূলক কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন।

দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকার লোকজন জানায়, বিভিন্ন এলাকায় কানে এয়ারফোন লাগিয়ে রেল লাইনে লোকজন হাঁটাহাঁটি করে। ফলে তাদের অনেকেই দুঘর্টনার শিকার হন। রেল লাইনে হাটাহাটির সময় ট্রেন এলে সিগনাল বা শব্দ শুনতে না পাওয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়।

টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা রেলস্টেশন পুলিশের ইনচার্জ আলী আকবর জানান, জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতি মাসেই কয়েকবার নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ সাদ ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশন এবং বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে গোপালপুরের হেমনগর পর্যন্ত প্রায় ২০টি ম্যানড গেট (গধহহবফ মধঃব) এবং প্রায় ৩০টি আনম্যানড গেট (টহসধহহবফ মধঃব) রয়েছে।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ো ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ জানান, প্রথমে ট্রেনে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা কারণে মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে। লেবেল ক্রসিং, মোবাইলের হেডফোন, সিগনাল না মানা সহ অসাবধনতার কারণেও মৃত্যু হয়।তিনি আরও জানান, জনসচেতনতার কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ জনপ্রতিনিধিদেরও এগিয়ে আসা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

১৫৭ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *