হাবিবুর রহমান ॥
টাঙ্গাইল জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউজ এবং শো-রুমগুলোতে ঈদের বেচাবিক্রি চলছে। মূলত শবে-বরাতের পর থেকে এসব মার্কেট, শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউজগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, করটিয়া পাইকারি মার্কেটগুলো থেকে ইতোমধ্যে সব ধরনের পোশাক-আশাক দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের মার্কেটগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি মার্কেট থেকে ইতোমধ্যে সব ধরনের পোশাক ও অন্যান্য উপকরণ সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। ফলে মার্কেটগুলোতে বেচাবিক্রি চলছে পুরোদমে। যারা থান কাপড় কিংবা থ্রি পিস বানিয়ে পরেন তারা ভিড় করছেন দর্জিপাড়ায়। ফলে কাজের ব্যস্ততায় দর্জিরা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। জেলা শহরের আকুর টাকুর পাড়ার বাসিন্দা শাহনাজ আক্তার জানান, তিনি হীরা মার্কেট থেকে থ্রিপিসের কাপড় কিনে ওই মার্কেটের দোতলায় বানাতে দিয়েছেন। একইভাবে তাঁর স্বামীর জন্য পাঞ্জাবি ও পাইজামার কাপড় কিনেছেন মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট থেকে। সেটি বানানো হবে মাহমুদুল হাসান কলেজ মার্কেট ভবনে। দর্জিরা জানিয়েছেন, ১৫ রোজার পর তারা আর অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এবার শবে-বরাতের পর থেকে তাদের কাজ বেড়েছে।
এছাড়া শহরের হবিবর রহমান প্লাজা, ছবুর খান টাওয়ার, আজিজ প্লাজা, সমবায় মার্কেট, হীরা সুপার মার্কেট, পৌর সুপার মার্কেটে দেখা গেছে, থরে থরে সাজানো হয়েছে নতুন পোশাকে। থ্রি পিস, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের পোশাক কেনায় আগ্রহী বেশি ক্রেতারা। এছাড়া শাড়ির মার্কেট থেকে পছন্দের শাড়ি কিনছেন ক্রেতারা। টাঙ্গাইল প্লাজা, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট,মাহমুদুল হাসান কলেজ মার্কেট এবং জেলা সদর রোডের ফ্যাশন হাউজগুলো এখন ভরপুর নতুন নতুন পোশাকে। বেচাবিক্রিও ভাল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়া আড়ং, ইজি, তাগা ম্যান, দর্জিবাড়ি, রিচম্যান, জেন্টল পার্ক, মেন্স ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমগুলোতে বাহারি ডিজাইন ও রংয়ের পোশাক আনা হচ্ছে। ২০ রোজার পর থেকে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ঈদে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পোশাক সামগ্রী। এবারও ঈদ কেনাকাটার সবার শীর্ষে পোশাক। এর পরই জুতা-স্যান্ডেল, লুঙ্গি-গেঞ্জি-গামছা। খাদ্যপণ্যের মধ্যে সেমাই-চিনি, মাংস, মিষ্টি, গ্রসারি পণ্য রয়েছে। প্রসাধনী, ইলেক্ট্রনিক্স টিভি, মোবাইলসহ নানা ধরনের পণ্যও কেনা হয় ঈদ উপলক্ষ্যে। অনেকে আবার সোনার গয়না, ঘরের আসবাবপত্র কেনেন বলে ঈদে এসব পণ্যের বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক গুন বেড়ে যায়। এর বাইরে ঈদের ছুটিতে পর্যটন খাতেও মানুষ অর্থ ব্যয় করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি পরিবার ন্যূনতম থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ঈদকে ঘিরে। সামর্থ্য অনুযায়ী এই অঙ্ক আরো বাড়ে।
টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ীরা বলেন, সারাবছর এই সময়ের জন্য মুখিয়ে থাকে ছোট-সড় সকল ব্যবসায়ীরা। ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বিনিয়োগ করেছেন। ইতোমধ্যে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে পাইকারি মার্কেটের পর এখন খুচরা পর্যায় থেকে ভোক্তারা সাধ্যমতো কেনাকাটা করছেন। ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ অনেক বাড়াচ্ছেন। ফলে রিজার্ভ শক্তিশালী হচ্ছে। ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য যখন চাপের মুখে তখন ঈদের কারণে আমরা ডলার পাচ্ছি। এটা সবচেয়ে ভালো দিক। শুধু তাই নয়, ঈদ ঘিরে অর্থনীতির সব খাতেই গতি ফিরে আসে। ঈদের মাসে যেমন সারাদেশের শপিংমল বা মার্কেটগুলো গতিশীল হয়-তেমনি সারাদেশের কুটিরশিল্প, তাঁতশিল্প, দেশীয় বুটিক হাউসগুলোয় বাড়ে কর্মচাঞ্চল্য ও আর্থিক লেনদেন। বিপুল অর্থ ব্যয়ের কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতিশীলতা আসে।