নুর আলম, গোপালপুর ॥
শুধুমাত্র ইউটিউব দেখেই রিমোট কন্ট্রোল বিমান বানিয়ে এবং উড়িয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন সিয়াম (১৫)। সে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাট বৈরানের গ্রামের বাসিন্দা কৃষক হাবিবুর রহমানে ছেলে। সে স্থানীয় সুতি ভিএম পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই কারিগরি কাজের প্রতি ব্যাপক ঝোঁক সিয়ামের। পিতার মোবাইল দিয়ে ইউটিউবে বিমান বানানো দেখেই ইচ্ছা জাগে বিমান বানানোর। ৫ বছর ধরে এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সে অনুযায়ী অনলাইন শপের মাধ্যমে এবং সশরীরে ঢাকা থেকেও যন্ত্রপাতি কিনে আনেন টিফিনের বাঁচানোর পয়সায়। এমন কাজে উৎসাহ দেখে তার বাবাও আর্থিক জোগান দিতে থাকে। আমেরিকান যুদ্ধ বিমান এফ২২ র্যাপ্টরের আদলে বানানো বিমানটির নাম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু এফ২২ র্যাপ্টর।
গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা ও গোপালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং সূতি ভিএম সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সামনে পরিষদ সংলগ্ন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিমানটি শুধুমাত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।
১০ম শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম জানান, পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা পেলে কৃষি কাজে ব্যবহৃত ড্রোন বানানোসহ, ক্যামেরা লাগিয়ে শতমাইল দূরে নজরদারি বিমান বানিয়ে দেশকে সহযোগিতা করতে পারবেন। সরকার সুযোগ দিলে যুদ্ধ বিমান বানানোর কাজে সহযোগিতা করে দেশকে এগিয়ে নিতে চান। বিমানটি বানানোর পর বাড়ির আঙ্গিনায় সাময়িক উড়ানো হলেও গবেষণার জন্য উড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতেও সহযোগিতা কামনা করেন। কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক কাজে পারদর্শীতার কথা অনেক আগেই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে জানিয়েছেন, তিনি তাকে অগ্রাহ্য করে এড়িয়ে গেছেন। ওই শিক্ষক কর্তৃক মেধা অবমূল্যায়নের কারনেই বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৪ এ স্থান পাননি।
সিয়ামের পিতা হাবিবুর রহমান বলেন, আমি কৃষক মানুষ এতো কিছু বুঝিনা। ওর এসব কাজের প্রতি আগ্রহ দেখে টাকা চাইলে চেষ্টা করতাম টাকা দিতে। সরকার যদি ওরে সহযোগিতা করে তাহলে আমার ছেলে ভবিষ্যৎ এ দেশের কাজে মনোযোগি হবে। আরও অনেক কিছু সৃষ্টি করতে পারবে।
সুতি ভিএম পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, সিয়াম এ ব্যাপারে আমাকে আগে কিছু জানায়নি। আজকে ওর মেধা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি। ওর প্রতিভার কথা এমপি ও ইউএনওকে জানাবো। আজ থেকে ওর গবেষণায় যা দরকার হবে বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হবে এবং আর্থিক সহায়তার জন্য ইউএনওকে অনুরোধ করবো।
এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জুলফিকার হায়দার বলেন, গ্রামের বাসিন্দা সিয়ামের প্রতিভা দেখে আমি বিস্মিত হয়ে গেছি। ওর বানানো বিমানটি চমৎকার লেগেছে। নিজের টাকায় এ রকম একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে ও যে স্বার্থক হয়েছে এটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে ওকে আর্থিক সহায়তা করার চেষ্টা করবো।