সাদ্দাম ইমন ॥
রমজান মাসের পুরোটা সময়জুড়ে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অসন্তোষ ছিল ক্রেতাদের মধ্যে। মাছ-মাংস-সবজি কিনতে হিমশিম খেতে হয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। এখন ঈদ সামনে রেখে আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বাজার। দাম বেড়েছে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, মসলা আর মুরগির। বিক্রি বেড়েছে পোলাও এর চাল, সেমাইয়ের। এসবের দামও গত বছরের তুলনায় বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। দাম বাড়ার জন্য চাহিদা বৃদ্ধি আর সরবরাহ সংকটের অজুহাত দিচ্ছেন বিক্রেতারা। সাধারণ ক্রেতাদের বাজার করতে গিয়ে দিশেহারা অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কারণ ঈদের আগে আরেক দফা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম।
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাছ, মুরগি, ডিম, সবজি, মসলাসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতাদের কেউ সরবরাহের ঘাটতিকে দুষছেন, তো কেউ তীব্র গরমের কথা বলছেন। কেউবা আবার ঈদকে ঘিরে পাইকারী বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার ও পরিবহন খরচ বাড়ার অজুহাত দিচ্ছেন। ক্রেতাদের দাবি, প্রতি বছর ঈদের আগে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর এই চিত্র নিয়মিত ঘটনা। সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকির অভাবেই এ সুযোগ নেন বিক্রেতারা। আর এর ভুক্তভোগী হতে হয় সাধারণ ক্রেতারাদেরই। বাজারের সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে জাকির নামের এক বিক্রেতা বলেন, ঈদে মানুষ গ্রামে যাওয়ায়, সেখানেই বেচা-বিক্রি ভালো হয়। তাই শহরে শাক-সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেড়েছে।
হৃদয় নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, তীব্র গরমের কারণে অন্যান্য সময়ের তুলনায় সবজি বেশি নষ্ট হচ্ছে। সেটি সমন্বয় করতেই একটু বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিক্রেতা বলেন, ঈদে অনেকে বিক্রেতারা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তাই যারা আছেন তারা একটু বেশি লাভেই শাক-সবজি বিক্রি করছেন। বিক্রেতারা অজুহাত যাই দিক, শাক-সবজির দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও সরকারের যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবকেই দায়ী করছেন ক্রেতারা। ইকবাল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, বিক্রেতারা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলেও আমাদের কিনতে হয়। যাদের অবৈধ ও দুর্নীতি করা টাকা রয়েছে, তাদের এতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সংসার চালানোই দায় হয়ে যায়। সরকার ঠিকমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে না বলেই, বিক্রেতারা দাম বাড়ানোর এই সুযোগটা নিতে পারে। আমিনুর রহমান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ওপর তো জুলুম চলছে। বাজার ও ব্যবসায়ীদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই তো প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে। হাসান মাহমুদ নামের বাজারের এক মসলা বিক্রেতা বলেন, পাইকারী বাজারে দাম বেশি, তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
এদিকে ফের বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দুই দিন আগেও ২শ টাকা কেজি বিক্রি করা ব্রয়লার মুরগি আজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়। এছাড়া ৩৫০ টাকার সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা, ৩২০ টাকার সাদা কক বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা। তবে লাল লেয়ার মুরগি আগের মতোই ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে শহীদ নামের বাজারের মাছ বিক্রেতা বলেন, ঈদের আগে পণ্যবাহী গাড়ি বন্ধ থাকায় চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নেই। তাই দাম ও বেশি। নানা চেষ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না ভোজ্যতেলের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে লিটারে ৫ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন আর পাম অয়েল। মসুর ডাল কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে চার টাকা আর খোলা চিনি কেজিতে দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতো ১৩০ টাকায়। দাম বেড়ে এখন ১৬০ টাকা। একইভাবে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সোনালি আর দেশি মুরগির দাম। হোটেল-রেস্তোরাঁয় চাহিদা কমায় বিভিন্ন ধরনের মসলার দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে এলেও, ঈদকে সামনে রেখে আবারও বেড়েছে। এলাচি, জিরা, দারুচিনি ও লবঙ্গসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার মানভেদে দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে ঈদ এলেই বাড়ে সেমাই আর পোলাও এর চালের চাহিদা। এসবের দামও তুলনামূলক বেশি বলে জানান ক্রেতারা। উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকির দাবিও জানান ক্রেতারা।