
হাবিবুর রহমান ॥
দেখতে দেখতে চলে গেল ২৬ রমজান। ঘরে বাইরে সব জায়গায় শুরু হয়েছে ঈদের আমেজ। অন্য বছরের তুলনায় এবার বাজারের আকার বেড়েছে। খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে পণ্যের দাম। এরপরও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টাঙ্গাইলের সকল বিপণি বিতানগুলোতে ভিড় লেগেই আছে ক্রেতাদের। তৈরি পোশাকের অর্ডার দেওয়ার সময় ও সুযোগ শেষ। তাই মার্কেট ও ফুটপাতে কেনাকাটা বেড়ে জমজমাট অবস্থা।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইল ক্যাপসুল মার্কেটের গলিতে প্রচুর ক্রেতার আনাগোনা দেখা যায়। ছোট দোকান ও ফুটপাতে অনেকেই ঈদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। রঙিন পোশাক আর আলোর ঝলকানিতে সেসব পণ্য আকৃষ্ট করছে ক্রেতাদের। ক্রেতারা জানান, মার্কেটে যেসব কাপড় পাওয়া যায়, একই রকম কাপড় ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দামের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। কমদামে পাবো বলেই ফুটপাতে আসা। কিছু ক্রেতার অভিযোগ ছোটদের জামা কাপড়ের দাম ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। আগে যেটা ২০০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন তা ৪০০ টাকার ওপরে। টাঙ্গাইল ক্যাপসুল মার্কেটের গলির পাশেই শাড়ির বেশকয়েকটি দোকান রয়েছে। সন্ধ্যায় এসব দোকানে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। অনেক নারীর অভিযোগ গতবারের চেয়ে এবার দাম বেশি চাচ্ছেন শাড়ি ব্যবসায়ীরা। তবে পাশেই রয়েছে মাহমুদুল হাসান কলেজ মার্কেট। নিম্নবিত্তদের এই মার্কেটে যাতায়াত বেশি। পণ্যের সম্ভারে প্রতিটি দোকান যেন ঠাসা। সেই সঙ্গে ভিড়ও লক্ষ্য করা গেছে। দোকানিরা জানান, এবার বাজার মন্দ নয়। কেনাবেচা বেশ ভালো। ঈদকে কেন্দ্র করে দিন যত আগাবে, ততই বেচাকেনা বৃদ্ধি পাবে।
অল্প দামে পছন্দের পোশাক, গয়না, জুতা, স্যান্ডেল প্রসাধনীসহ ঈদের পণ্য কিনতে নিম্নআয়ের মানুষের কেনাকাটায় ব্যস্ততা বেড়েছে। ভিড় জমেছে ফুটপাত ও খোলা জায়গায় বসানো অস্থায়ী দোকানে। অন্যান্য এলাকায় যেমন ডিষ্ট্রিক মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মূলত নিম্নআয়ের লোকজনকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে প্রচুর দোকান খোলা হয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি অনেক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোকজনও তাদের দোকানে কেনাকাটার জন্য আসছেন। সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ফুটপাতগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এ বছর পাঞ্জাবিসহ বাচ্চাদের জামা ভালোই বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুটপাতগুলোতে মেয়েদের পোশাক, শিশুদের পোশাক, প্রসাধনী, জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, ট্রাউজার, জুতা, বেল্ট, ক্যাপ, লুঙ্গি, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শন করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, শপিংমলে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি, সবার সাধ্যও নেই। তাই ফুটপাতের স্টলে কেনাকাটা করছেন অনেকে। ক্রেতাদের চাপে প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত হাজার-হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকছে ফুটপাত ও পুরো মার্কেট এলাকা। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে দুপুরের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত। তখন মানুষের ভিড়ের কারণে ঠিকমতো হাঁটার জায়গাও পাওয়া যায় না।
ক্রেতারা জানান, ঈদের আর বেশিদিন বাকি নেই। প্রস্তুতি বাকি অনেক। মার্কেটে পোশাকসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। ঈদ যত এগিয়ে আসবে, দাম আরও বাড়বে। সে কারণে একটু আগেভাগেই কেনাকাটার ঝোঁক রয়েছে অনেকের। টাঙ্গাইল শহরের বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, অস্থায়ী দোকানগুলোতে কেউ চৌকি পেতে, কেউ কাঠের টেবিল বা ভ্যানের ওপর, কেউ হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে, আবার কেউ চাদর বিছিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকের সঙ্গে প্রসাধনী সামগ্রী সাজিয়ে রেখেছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে পণ্যের সম্ভারও রয়েছে বেশ। ফুটপাতের দোকানি আশরাফ আলী জানান, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুটপাতে ব্যবসায় সমস্যা কম হচ্ছে। গরম বেশি নেই সে কারণে ক্রেতাদের আনাগোনাও বেড়েছে। দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া রোড-নিরালা মোড় এলাকায় মানুষের ব্যাপক আনাগোনা দেখা যায়। কেউ শপিং ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন, কেউ আবার যাচ্ছেন নতুন কাপড় কিনতে। ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না থাকায় মূল সড়ক ধরেই হাঁটছেন অনেকে।
ক্রেতারা জানান, কাপড়ের তুলনামূলক মান ও সহনীয় দামের কারণে মধ্যবিত্তের মধ্যে হীরা মার্কেটের খ্যাতি আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে দর কষাকষিতে পারদর্শী হতে হয়। এখানে একসঙ্গে সব ধরনের ও সব বয়সীদের পোশাক পাওয়া যায়। তবে এবার বিক্রেতারা এখনো দাম হাকছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই বিক্রি বেড়েছে অনেক। ক্রেতাদের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিদিন এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও মার্কেট খোলা রাখায় বিক্রি বেশ হচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতা দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই ক্রেতার উপস্থিতি ভালো দেখা যাচ্ছে। শুরু থেকেই মানুষজন অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এখানে কেনাকাটা করতে পারছেন। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাস শেষে অনেকেই বেতন পাওয়ায় বেচা বিক্রি অনেক বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।