হাবিবুর রহমান ॥
রমজানের শেষ লগ্নে উত্তাপ ছড়ানো ঝাঁজালো রোদ উপেক্ষা করে টাঙ্গাইলে ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটে ছুটছেন ক্রেতারা। নিজের জন্য না কিনলেও প্রিয়জনদের জন্য অনেকেই টাঙ্গাইলের বিপণি বিতানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। এতে শেষ সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগমে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মার্কেটগুলো।
কেনাকাটা করতে আসা মনিরা মুন্নি বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই অপেক্ষা করছি রোদ কমলে কেনাকাটা করতে আসব। কিন্তু রোদ কমার কোনো নাম গন্ধ নেই। নিউজে দেখলাম আরও কয়েক দিন তাপদাহ থাকবে। তাই আজকে গরম উপেক্ষা করেই মার্কেটে এসেছি। মার্কেটে প্রায় এক ঘণ্টা আগে এসেছি, নিজের জন্য একটি নায়রা ড্রেস কিনেছি। এখনও জুতা কসমেটিকসসহ অনেক কেনাকাটা করতে হবে। এতো গরমের মধ্যে আজকে সবকিছু কিনতে পারব কি না জানি না।
জানা গেছে, এবার মার্কেটে তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় নায়রা ও পাকিস্তানের আর্গানজা। এর মধ্যে নায়রা বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে এবং আর্গানজা বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। তবে গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে অনেকেই সুতি কাপড়ও কিনছেন। অন্যদিকে বরাবরের মতো ছেলেদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পাঞ্জাবি, পায়জামা ও মেন্ডারিন ভেস্ট বা কটি। আড়ং, জেন্টলপার্ক, সেইলর, ইয়েলো, ইনফিনিটি, ইজি, জারা, প্লাস পয়েন্টসহ প্রায় সব ব্র্যান্ডের দোকানেই ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি। ইনফিনিটি ব্র্যান্ডের বিক্রেতা বলেন, ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরা ঈদ উপলক্ষে পোশাকে নতুনত্ব রেখেছি। এ বছর আশানুরূপ ক্রেতাও পাচ্ছি। ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি শার্ট ও প্যান্টে। আশা করছি ঈদের আগ মুহূর্তে ক্রেতা আরও বাড়বে। নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন জুতা কিনতে অনেকেই ভিড় করছেন জুতার ব্র্যান্ডগুলোতেও। অ্যাপেক্স, বে, বাটাসহ সব স্টোরেই ক্রেতাদের তিল ধারণের জায়গা নেই। অনেকেই এসেছেন পরিবার নিয়ে, শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষই পছন্দ করছেন জুতা। ব্র্যান্ডগুলোতে ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নানা ধরনের নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা আনা হয়েছে। পছন্দ ও সামর্থ্য অনুযায়ী জুতা কিনছেন ক্রেতারা। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে নারীদের জুতা।
বাটা শো-রুমের ইনচার্জ বলেন, আমরা ঈদ উপলক্ষে ছয়শর বেশি কালেকশন রেখেছি। এবার প্রচুর ক্রেতা আসছেন। লেডিস, মেন্স, কিডস সব ধরনের জুতার চাহিদাই খুব ভালো। তবে নারীদের জুতা একটু বেশি বিক্রি হচ্ছে। পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা আহমেদ আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, এই তাপদাহের মধ্যে রোজা রেখে বাইরে বের হতে কষ্ট হলেও ছেলেমেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের কেনাকাটার জন্য মার্কেটে এসেছি। অন্য সময়ের চেয়ে দাম একটু বেশিই চাচ্ছে। ঘুরতে ঘুরতে পা ব্যথা হয়ে গেছে। তাই একটু জিরিয়ে নিচ্ছি। স্ত্রী ও মেয়ে ঘুরে ঘুরে কাপড় পছন্দ করছে। দামদর ঠিক হলে আমাকে ডাকলে টাকা দিয়ে আসব। বড় পরিবার বাবা-মা, ভাই-বোন ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনদের জন্যও কেনাকাটা করতে হবে। তাই একটু সকাল সকাল এসেছি। এদিকে পোশাক ও জুতার পাশাপাশি নারীদের কসমেটিকসের দোকানেও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রাজিতা রুজি নামে এক তরুণী বলেন, কসমেটিকস না কিনলে তো ঈদের কেনাকাটার পূর্ণতাই পাবে না! তাই কসমেটিকস কিনতে এসেছি। তবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু দাম বেশি চাচ্ছে, দামাদামি করে কিছুটা কমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
আলমাস অ্যান্ড ব্রাদার্সের বিক্রেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, আইলাইনার, মাসকারা, আইল্যাশ, নেইলপলিশ, ফেসপাউডার, আইস্যাডো ফেস পাউডার, ফাউন্ডেশন, প্যানকেক, বডি স্প্রে, পারফিউম, প্যানস্টিক, শ্যাম্পু, সাবান এসব নতুন করে কিনছেন তারা। কসমেটিকসের ক্ষেত্রে দেশি বিদেশি কোনো ভাগ নেই। যার যেমন পছন্দ ও সামর্থ্য সে অনুযায়ী ক্রেতারা কিনছেন এসব পণ্য। এর মধ্যে বেশি চলছে গোল্ডেন রোজ এর পণ্য। নিওর, জ্যাকলিন, লরিয়াল, র্যাভলন, মেবলন জর্ডানা, ফ্লোমার, কোম্পানির কসমেটিকস বেশি চলছে।