
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলে মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি পদে পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর মনোনীত হওয়ায় শহরে আলোচনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কলেজের বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা পেতে জেলা প্রশাসককে বাদ রেখে সু-কৌশলে পৌরসভার মেয়র সভাপতি মনোনীত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শহরের অলি-গলি থেকে শুরু করে সূধীমহল ও শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা গেছে, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজ গভর্নিংবডির মেয়াদ শেষে চলতি বছরের (২৪ মার্চ) নিয়মানুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইব্রাহিমের স্বাক্ষরে গভর্নিংবডি গঠনে সভাপতি পদের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবিত তালিকায় সভাপতি পদে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে তালিকার এক নং ক্রমিকে রেখে অন্যদের নাম পাঠানো হয়। পাঠানো প্রস্তাবে সভাপতি পদে পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের নাম ছিল না। প্রস্তাবিত তালিকায় নাম না থাকলেও বায়বীয় কারণে পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরকে কলেজ গভর্নিংবডির সভাপতি ও আমিরুল ইসলাম খানকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনোনীত করে এক পত্র দেওয়ায় শহরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
গত (৪ এপ্রিল) প্রদত্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্রে (স্মারক নং-আইএনএস ০২/০০২৫৪/২০১৮/৫৩২৫/১৩৩৭, তাং-০৪/০৪/২০২৪ইং) উল্লেখ করা হয়েছে- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্নিংবডি গঠন সংক্রান্ত অধিভুক্ত কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের গভর্নিংবডি (সংশোধিত) সংবিধি-২০১৯ এর ৭নং ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ভাইস-চ্যান্সেলরের আদেশক্রমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলতানা ওই পত্রটি ইস্যু করেছেন। পত্রের ১নং ক্রমিকে এসএম সিরাজুল হক আলমগীর সভাপতি ও আমিরুল ইসলাম খানকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসানের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ হাসান ও পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের সাথে সমন্বয় করে কলেজের উন্নয়নের স্বার্থে সহজভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে যোগাযোগ করে জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে পৌরসভার মেয়রকে সভাপতি করা হয়েছে।
জেলার শিক্ষানুরাগীরা জানায়, কলেজ পর্যায়ের গভর্নিংবডি গঠনে সাধারণত ৩ জনের নাম প্রস্তাব করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার না থাকলে কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে পরামর্শ এবং যোগ্যতা বিবেচনায় গভর্নিংবডির সভাপতি/ বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনীত করা হয়। অধ্যক্ষ প্রেরিত প্রস্তাবিত তালিকায় করো নাম না থাকলে এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ডিও লেটার না দিলে বাইরে থেকে কাউকে সভাপতি বা বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনীত করার তেমন একটা সুযোগ নেই।
টাঙ্গাইল শহরের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম উজ্জল জানান, গভর্নিংবডি গঠনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নামের প্রস্তাব পাঠানো হয় গত (২৪ মার্চ)। তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছেন গত (২৮ মার্চ)। তার আগে পাঠানো প্রস্তাবিত নাম থেকেই গভর্নিংবডির সভাপতি মনোনীত করার কথা। তাছাড়া জেলা প্রশাসক বা পৌরসভার মেয়র গভর্নিংবডির সভাপতি যিনিই হোন তার সঙ্গে সমন্বয় করে কলেজের কার্যক্রম চালাবেন। তিনি নিজেকে সৎ মানুষ দাবি করে জানান, কোন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির তোয়াক্কা তিনি করেন না। এজন্য যে কারো সঙ্গে উন্নয়ন কাজ করতে বা কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করতে তার কোনো ভয় বা শঙ্কা নেই।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের সঙ্গে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে তার একান্ত সহকারী ইমরান খান তাপস মেয়র মহোদয় খুবই ব্যস্ত তাই কথা বলতে পারছেন না এবং মোবাইল ফোন তাকে দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানান।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত। তবে ওই কলেজে গভর্নিংবডির সভাপতি থাকাকালে কমিটির অন্য সকলের সহযোগিতায় অত্যন্ত সুচারুভাবে কলেজের কাজ সম্পন্ন করেছেন। জেলা প্রশাসকের নাম প্রস্তাব করার পর কিভাবে অন্য করো নাম সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছে- তা তিনি জানেন না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলতানা জানান, এ বিষয়ে কাগজপত্র না দেখে তিনি কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজের গভর্নিংবডি গঠনে তিনি কাউকে ডিও লেটার দেন নাই। জেলা প্রশাসকের নাম প্রস্তাব করার কথা জানতে পেরে তিনি জেলা প্রশাসককে সমর্থন জানিয়েছেন। পরে শহরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হওয়ার পর জানতে পেরেছেন পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরকে সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে। যেহেতু তিনি কোন ডিও লেটার দেন নাই এবং জেলা প্রশাসকের নাম প্রস্তাবিত তালিকায় ১ নম্বর ক্রমিকে থাকার পরও কিভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তালিকার বাইরের লোককে সভাপতি করেছেন, এটা তার বোধগম্য নয়।