সাদ্দাম ইমন ॥
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। না, কথার কথা নয়। বাস্তবেই উৎসবপ্রিয় বাঙালি। জীবনে সমস্যা সংকটের শেষ নেই। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। এর পরও হাসি আনন্দে মাততে বাধা নেই। ছোটখাটো উপলক্ষ পেলেই উদ্যাপন শুরু করে দেয়। আর এখন? বিরাট বড় দুই উপলক্ষ। এক সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এসেছে ঈদ এবং বাংলা নববর্ষ। আকাশের চাঁদ সায় দিয়েছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) উদ্যাপন করা হবে ঈদুল ফিতর। তার দু’দিন পর বাংলা নববর্ষ। সঙ্গত কারণেই এবার বাড়তি আনন্দ। প্রস্তুতি পর্বে সেই আনন্দ উচ্ছ্বাস বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
অন্যবারের মতো এবারও রোজা শুরু হতে না হতেই ঈদ প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে এ পর্যায়ে এসে একেবারে জমজমাট অবস্থা। এখন মধ্যরাতের পরেও টাঙ্গাইলের মার্কেট, শপিংমল খোলা থাকছে। উৎসব পার্বণের প্রাণ মূলত নারীরা। সেই নারীরাই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মার্কেট শপিংমল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। চৈত্রের খড়তাপ। বিপুল ভিড়। সব উপেক্ষা করে নিজের এবং পরিবার পরিজনের জন্য কেনাকাটা করছেন তারা। পুরুষরাও যে বসে আছেন এমন নয়। বিশেষ করে তরুণ ও মাঝ বয়সীরা নিজের পছন্দের কেনাকাটার জন্য হন্য হয়ে ছুটছেন। শাড়ি থ্রি পিস পাঞ্জাবির শোরুমগুলোতে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো পাঞ্জাবির শোরুমে ঢুকতেই রীতিমতো লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঈদ উৎসবকে আনন্দঘন করতে আরও যত যা কেনা যায়, কিনছে মানুষ। তাদের কেনাকাটা, উপহার বিতরণ, ঈদের ছুটিতে গ্রামে ফেরার তোড়জোড় এ সবই বলে দিচ্ছে ঈদ আসন্ন।
একই সময় সমান আবেগ উচ্ছ্বাস আনন্দ নিয়ে ছলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। এবার ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বরণ করার পালা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেবে। সে লক্ষ্যে চলছে বর্ণিল প্রস্তুতি। বহুকালের ঐতিহ্য মেনে পহেলা বৈশাখ ভোরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নাগরিক উদ্যাপনের সূচনা হবে। বাঙালিত্বের গভীর বোধ নিয়ে অসংখ্য মানুষ এখানে সমবেত হবেন। মঞ্চের শিল্পীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গানে কবিতায় তারা বরণ করে নেবেন নতুন বছরকে। আকর্ষণীয় মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে বাঙালির লোক ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হবে। সেলক্ষ্যে এখন চারুকলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রস্তুতি দেখেই মন ভরে যায়। আনন্দে নেচে ওঠে।
অনেকেই বলছেন, এবার ঈদের দিন এবং পরের দুই দিন বিকেলে বেড়াতে চান তারা। ঈদের পাঞ্জাবী পরেই দেখতে চান বৈশাখের প্রস্তুতি। ঈদের ছুটিতে সবাই শহর ঘুরে বেড়াবেন। এভাবে ঈদ এবং বর্ষবরণের আনন্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি।
এদিকে, ঈদের কেনাকাটার পাশাপাশি পহেলা বৈশাখের জন্য আলাদা কেনাকাটা করছেন অনেকে। বর্ষবরণের দিন পরার জন্য লাল সাদা রঙের পাঞ্জাবী কিনছেন ছেলেরা। নারীরাও খুঁজে নিচ্ছেন বাঙালি মোটিফ সমৃদ্ধ শাড়ি। বর্ষবরণের দিন বাসায় বাসায় থাকবে ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন। এসব খাবার পরিবেশনের জন্য মাটির পাত্র ইত্যাদিও কেনা হচ্ছে এখন। সব মিলিয়ে দারুণ সময়। দুই উৎসবে ব্যাপক মেতেছে বাঙালি। এই আনন্দ উদ্যাপন চলমান থাকুক।