ঈদ মানেই খুশি ঈদ মানেই ভরপুর আনন্দ

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল নিজস্ব মন্তব্য বিনোদন লিড নিউজ

সাদ্দাম ইমন ॥
বড় বেলার ঈদের চাইতে ছোট বেলার ঈদটাই বেশি আনন্দদায়ক। ঈদের ২-৩ দিন আগেই ঈদের নতুন জামা বানানো হয়ে যেতো। একটু পর পর সেই জামাটা বের করে দেখা সব ঠিক আছে কিনা। আর খুশিতে মন দোল খেত। নিজে দেখতাম কিন্তু আর কাউকেই দেখানো হতো না নতুন জামাটা। যক্ষের ধনের মতো লুকিয়ে রাখতাম না হলে যে ঈদ হবে না!
ঈদের আগের সন্ধ্যায় পাড়ার সব্বাই দল বেঁধে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চিকন বাঁকা সোনালি চাঁদ দেখতাম, খুশিতে ভাইয়েরা বাজি-পটকা ফোটাতো। আব্বা বলতেন, ঈদের চাঁদ দেখে সবাইকে নামাজ পড়তে। সবার দেখাদেখি আমরা ছোটোরাও নামাজে দাঁড়াতাম বড়দের পেছনে, মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা আর নিচে হাফপ্যান্ট…। ঘুমানোর আগে হাতে নকশা করে মেহেদি দিয়ে ঘুমাতাম। আর সকালে বিছানার চাঁদরে সেই মেহেদির আঁকিবুঁকি দেখে মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতে একে অপরের ঘাড়ে দোষ দিতাম। সেও আর এক মজা!!
ঘুম থেকে উঠে লাল-নীল-হলুদ-সবুজ কাগজ কেটে সারা বাড়ি ঝালর দিয়ে সাজাতাম। জরি দিয়ে কাগজে ঈদ মোবারক লিখে দরজায় লাগাতাম। সবাই একসঙ্গে পুকুরে গোসল করতে যেতাম, সাঁতার কেটে গোসল করে যখন ফিরতাম তখন সব কটার চোখ লাল রক্ত জবা… এরপর নতুন জামা পরে আব্বা-আম্মাসহ সব বড়দের সালাম করতাম। ঈদের নামাজ শেষে বড়-ছোট সবার সাথে কোলাকুলি করার আনন্দ অনেক বেশি। সবাই যখন সালামি দিত, তখন আমার সব চাইতে ভালো লাগত। রাতে সব হিসাব করতাম কে কত সালামি পেলাম।
সকালে সালাম শেষে মায়ের হাতের পায়েস খেতাম। আমার মায়ের হাতের পায়েস জগৎ বিখ্যাত। পৃথিবীর আর কারও পায়েস এতো মজা হয় না। তারপর সবার সঙ্গে ঈদের নামাজে যেতাম। সবার কোলাকুলি দেখতে ভালো লাগত। বাসায় ফিরে আসার পর সবাই মিলে টিভিতে বাংলা সিনেমা দেখতে বসতাম। আমার মেজো আপু দুঃখের যে কোনো দৃশ্যে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। আমি তখন মজা করে তার চোখের নিচে জগ-মগ ধরতাম। তখন সবাই হাসাহাসি করলে লজ্জায় তার কান্না থামত। এরপর দুপুরে সবাই মিলে মায়ের রান্না করা পোলাও-মাংস, রোস্ট, কোর্মা, জর্দা, সেমাই খেতাম মজা করে। সবাই ইচ্ছা মতো পেট ভরে খেলেও, ঈদের পর দিন সকালে উঠে আমার ছোট বোন বলবেই, আমি ঈদের দিন কিচ্ছু খাইনি…এটা নিয়ে আমরা এখনো হাসাহাসি করি।
সবাই মিলে ঈদের দিন এক সঙ্গে গ্রুপ ছবি তুলতাম, সেগুলো এখনো অনেক আনন্দময় ঈদের সাক্ষী হয়ে আছে। সেই ঈদের দিনের আনন্দ আজ আর নেই। ঈদের আগের রাতে আর ঈদের দিন সকালে টিভিতে, “ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ” গানটা না শুনলে যেন ঈদ ঈদ মনে হতো না, এখনো ঈদ এর সকালে এই গান শুনি। ঈদের দিন বড় ভাইয়ার পাঠানো ক্যাসেট প্লেয়ারে মান্নাদের গান বাজত সারাদিন… কী যে ভালো লাগত…।
মেহমানরা আসত দল বেঁধে বেড়াতে। মা আর বড় আপুরা যতœ করে খাওয়াতেন সবাইকে। ভালো লাগত। ঈদ মোবারক সবাইকে।

 

 

 

 

 

২৬৭ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *