মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল ॥
বার মাসে তের পার্বণের দেশ আমাদের এ ব-দ্বীপ। আমাদের জন্মভূমি। কথায় বলে, বাঙালি আমুদে জাতি, উৎসবপ্রিয় জাতি। উৎসব পেলে অন্য সবকিছু ভুলে থাকতে পারে বাঙালি। তবে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, এত উৎসবের ভিড়েও ধর্মনিরপেক্ষ মিলিত বাঙালির উৎসবের সংখ্যা খুব বেশি নয়। কয়টা উৎসব আছে আমাদের- যেখানে সবাই একনিষ্ঠভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, ধর্মীয় ও সামাজিক দেয়ালের ঊর্ধ্বে উঠে নিষ্ঠভাবে পালন করতে পারে প্রকৃত অংশগ্রহণকারীর ভূমিকা। সবার অংশগ্রহণে মিলিত বাঙালি যে কয়টা অনুষ্ঠানে মুখর হয়ে ওঠে- বাংলা নববর্ষ উৎসব তার অন্যতম। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাঙালি জনগোষ্ঠী ধর্মীয়-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মিলিতভাবে পালন করে আসছে বাংলা নববর্ষ উৎসব। স্বাধীনতা উত্তরকালে একুশে ফেব্রুয়ারি, তৎপরবর্তীতে স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসের মতো সর্বজনীন উৎসব পালনের দিন আমরা পেয়েছি বটে, তবে এ ক্ষেত্রে নববর্ষ উৎসব যে ভিন্ন মাত্রাসঞ্চারী- তা বলাই বাহুল্য।
বাংলা নববর্ষ পালনের ইতিহাস অতি প্রাচীন। তবে সম্রাট আকবরের শাসনামলে এ ক্ষেত্রে সূচিত হয় ভিন্ন মাত্রা। হিজরি অব্দের সঙ্গে এ দেশের ফসলি পঞ্জিকা মিলিয়ে আকবর যে নতুন সাল গণনা চালু করেন- তা এ অঞ্চলের সংস্কৃতির উদার সমন্বয় ধর্মিতার সাক্ষ্য বহন করে। সম্রাট আকবর-প্রবর্তিত নববর্ষের সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক ছিল প্রত্যক্ষ। তার নববর্ষ ভাবনায় সূক্ষ্ম অর্থনৈতিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কেননা, কৃষকের ঘরে এ সময় ফসল থাকে, ফলে তারা বাৎসরিক খাজনা পরিশোধ করতে পারে। অতীতে নববর্ষের প্রথম দিন থেকেই বাঙালির অর্থনৈতিক জীবনের বাৎসরিক নতুন পথচলা শুরু হতো- এখনো কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রচলণ আছে এই ঐতিহ্য। সাংবাৎসরিক হিসাব-নিকাশ চলে এই দিনে, ব্যবসা-বাণিজ্যের লাভ-ক্ষতি মিলিয়ে দেখা হয় পহেলা বৈশাখে।
ব্যবসায়ীদের কাছে এ অনুষ্ঠান ‘হালখাতা’ নামে পরিচিত। ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান মূলত অর্থনৈতিক চিন্তার ফল। এ অনুষ্ঠান নতুন বছরের হিসাব খোলার এক আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ। হালখাতায় কাজ-কারবারের লেনদেন, বাকি-বকেয়া, জমা-খরচ সবকিছুর হিসাব লিখে রাখবার ব্যবস্থা হয়। দোকানিরা তাদের গ্রাহক, পৃষ্ঠপোষক ও শুভ্যার্থীদের দোকানে নিমন্ত্রণ করেন। সবার সঙ্গে দেখা হয়। হয় মিষ্টিমুখ। গ্রাহক পুরনো বকেয়া শোধ করেন। শুরু হয় আবার নতুন লেনদেন। নববর্ষে হালখাতার এ অনুষ্ঠান নানা কারণেই এখন পুরনো পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে। তবে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য, বোধকরি এ ঐতিহ্যের আন্তরিক অনুশীলন এখন অতি জরুরি। অতীতে নববর্ষ উৎসব যে অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ছিল, তার আরেক প্রমাণ এদিনই কৃষক নতুন বছরের কৃষিকাজ শুরু করতেন। হয়তো মাঠ চাষের অনুপযোগী, বৃষ্টির জন্য কৃষক আকাশের দিকে তাকিয়ে, তবু নববর্ষ এলে শুভ সূচনা হিসেবে তিনি মাঠে যান, সামান্য চাষ করে নতুন বছরের কৃষিকাজ আরম্ভ করে দেন। এভাবে দেখলে বলতে হয়, বাংলার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির সঙ্গে অতীতে নববর্ষ উৎসব ছিল সরাসরি সম্পর্কিত।
অতীতে, বাংলার সামন্ত যুগে, নববর্ষের সঙ্গে ‘পুণ্যাহ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এ অনুষ্ঠানে প্রজাসাধারণ জমিদারকে খাজনা পরিশোধ এবং নতুন বছরের খাজনা প্রদানের সূত্রপাত করতেন। জমিদারতন্ত্রের অবসানের ফলে এ প্রথা এখন উঠে গেছে। তবে ওই অনুষ্ঠানের ইতিবাচক দিক সামাজিক মেলামেশা এখনো বর্তমান। গ্রামগঞ্জে জমির বার্ষিক খাজনা প্রদান করা হয় চৈত্র মাসে। নববর্ষের আগেই খাজনা পরিশোধের এ বিধান গ্রামজীবনে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম দিক। নববর্ষ উৎসবের এ অর্থনৈতিক চারিত্র্য ক্রমে সামাজিক মাত্রা অর্জন করে। নববর্ষ আয়োজনের অর্থনৈতিক দিকগুলোর চেয়ে আস্তে আস্তে সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ক্ষেত্রে নববর্ষের সময় নানা অঞ্চলে বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নতুন জামা-কাপড় পরিধান, আতœীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো এসব আয়োজনের কথা বলা যায়। এসব
অনুষ্ঠান প্রকৃত প্রস্তাবে সামাজিক অনুষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে বৈশাখী মেলা এবং নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা মনে আসে। নববর্ষে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে মেলা, এ মেলা এখন শহুরে জীবনেরও অংশ হয়ে গেছে। বৈশাখ মাস জুড়ে চলে এ আয়োজন। কোথাওবা তিন, সাত বা মাস ব্যাপী মেলা বসে। এসব মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি হয়, বিক্রি হয় নানা ধরনের খেলনা। মেলায় যাত্রা, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, পুতুলনাচ ও সার্কাস বসে গ্রামীণ জীবনে দেখা দেয় নতুন উৎসাহ, নতুন উদ্দীপনা। আতœীয়স্বজন-পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা হয়, তৈরি হয় সামাজিক মেলামেশার বৃহৎ এক বাতাবরণ।
বিভাগোত্তরকালে, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আমলে, বিশেষ করে ষাটের দশকে এসে নববর্ষ উৎসবের আর্থিক-সামাজিক চারিত্র্যের পরিবর্তন ঘটে। নববর্ষ উৎসব হয়ে ওঠে উপনিবেশবাদ বিরোধী সংগ্রামে রাজনৈতিক এক হাতিয়ার। জাতীয়তাবাদী ভাবধারার ঢেউ বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে বাংলাদেশে নববর্ষ উৎসবকে গুরুত্ববহ করে তোলে। চল্লিশের শেষে এবং পঞ্চাশের দশকজুড়ে বাঙালির নববর্ষ উৎসব পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির না-পছন্দ ছিল। নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়ে তারা নববর্ষ উৎসব বন্ধ করতে চেয়েছে। ক্রমে নববর্ষ উৎসব পালন পরিণত হয় এক বিতর্কের বিষয়ে। এটা হিন্দুর উৎসব, না আকবর-প্রবর্তিত বলে মুসলমানের উৎসব এ নিয়েও নদীর পানি কম ঘোলা করা হয়নি। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার স্পর্শে নববর্ষ উৎসব রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ঔপনিবেশিক শক্তি ভয় পেয়েছে নববর্ষের এই চারিত্র্য বদলে স্বাধীন বাংলাদেশেও তাদের প্রেতাত্মারা, পরাজিত দানবেরা ভয় পায় নববর্ষের এই নতুন শক্তিকে। তাই রমনার বটমূলে তাদের বোমা ফাঁটাতে হয়, আন্দোলনের নামে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে মারতে হয় নিরীহ মানুষকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে মুখোশ পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাওয়া ধর্মবিরোধী কাজ বলে সবক দিতে হয়।
বাঙালির কাছে বৈশাখ এখন সঙ্গচেতনায় উদ্দীপ্ত হওয়ার উৎসব, আপন সত্তানুসন্ধানের উৎসব, জাতির ঠিকানা খোঁজার উৎসব। বাঙালির নববর্ষ-উৎসবে কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীদের হাটাচলাও দেখার মতো। মধ্যযুগের কবিদের রচনায় বৈশাখ এসেছে প্রধানত প্রকৃতির অনুষঙ্গে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বা জাতীয় কবি নজরুলের কবিতা ও গানে নববর্ষ এসেছে জীর্ণ পুরাতনকে সরিয়ে নতুনের আবাহন উৎস হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ জীর্ণ-পুরাতন গতানুগতিক জীবনকে বর্জন করে বৈশাখের আবির্ভাবে নতুন সত্তা নিয়ে সবাইকে জাগ্রত হওয়ার আহ্বান জানান। যারা সুপ্ত, যারা মুমূর্ষু, যারা সনাতনকে আঁকড়ে থাকতে চান, তাদের দূর করে তিনি আহ্বান করেন বৈশাখী নতুন জীবনকে। তাই তার গানে ভেসে আসে এই আবাহনী সুর–
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।
তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
রসের আবেশরাশি শুষ্ক করি দাও আসি,
আনো আনো আনো তব প্রলয়ের শাঁখ
মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক।’
সনাতন গতানুগতিক প্রচলিত সমাজের পরিবর্তে নতুন এক সমাজ প্রতিষ্ঠার ডাক থাকলেও, রবীন্দ্রনাথের গানে প্রধানত বিগত বছরকে ভুলে নতুন বছরকে আবাহনেই মুখর। কাজী নজরুল ইসলামের গানেও আমরা প্রায় একই ধারার অনুবর্তন লক্ষ্য করি। নজরুল লিখেছেন-
‘এল এলরে বৈশাখী ঝড়।
ঐ বৈশাখী ঝড় এল এল মহীয়ান সুন্দর।
পাংশু মলিন ভীত কাঁপে অম্বর, চরাচর, থরথর
ঘন বনকুন্ডলা বসুমতি।
সাগর-তরঙ্গ-মাঝে
তারি মঞ্জীর যেন বাজে,
বাজে রে পায়ে গিরি-নির্ঝর
ঝরঝর ঝরঝর
ধূলি-গৈরিক নিশান দোলে
ঈশান-গগন-চুম্বী,
ডম্বরু ঝল্লরী ঝনঝন বাজে,
এল ছন্দ বন্ধ-হারা
এল মরু-সঞ্চয়
বিজয়ী বীলবর।’ নজরুলের গানেও প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে পুরাতনকে দূর করে নতুনের আবাহনী সুর উচ্চারিত। দীর্ঘদিন ধরে বাঙালির সৃষ্টিশীলতায় বৈশাখ এভাবেই উপস্থিত হয়েছে, কবিরা-গীতিকাররা বৈশাখকে দেখেছেন নতুনের অনন্ত উৎস হিসেবে। বঙ্গীয় শিল্পী ও গীতিকার আব্বাস উদ্দীন তার ‘দিনলিপি ও আমার শিল্পী জীবনের কথা’ গ্রন্থে বৈশাখ নিয়ে তার লেখা ও গাওয়া ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে’ গানটিতে বাঙালি চেতনার এক চমৎকার বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি লিখেন-
‘বেলা দ্বি-প্রহর
ধু-ধু বালুচর
ধূপেতে কলিজা ফাটে
পিয়াসে কাতর
আল্লাহ, মেঘ দে
আল্লাহ, মেঘ দে, পানি দে
ছায়া দে রে তুই
আল্লাহ, মেঘ দে।
আসমান হইলো টুডা-টুডা
জমিন হইলো ফাডা
মেঘ রাজা ঘুমাইয়া রইছে
মেঘ দিবো তোর কেডা
আল্লাহ, মেঘ দে, পানি দে
ছায়া দে রে তুই।
ফাইট্টা ফাইট্টা রইছে যত খালা-বিলা-নদী
পানির লাইগা কাইন্দা ফিরে পঙ্খী জলধি
আল্লাহ, মেঘ দে, পানি দে
হালের গরু বাইন্ধা গিরস্ত মরে কাইন্দা
ঘরের ঘরণী কান্দে ডাইল খিচুড়ি রাইন্দা
আল্লাহ, মেঘ দে, পানি দে
ছায়া দে রে তুই।
কপোত-কপোতি কান্দে খোপেতে বসিয়া
শুকনা ফুলের কলি পড়ে ঝড়িয়া ঝড়িয়া
আল্লাহ, মেঘ দে, পানি দে
ছায়া দে রে তুই
আল্লাহ, মেঘ দে।
আব্বাস উদ্দীন তার ‘দিনলিপি ও আমার শিল্পী জীবনের কথা’ গ্রন্থে গানটির স্মৃতিচারণ করে ২৩১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- “আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’ গানখানা বহুবার গেয়েছি। যত দিনই গেয়েছি, গানের শেষে ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে উপাখ্যান বা প্রবাদবাক্য কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, তার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ঢাকায় এলেন। আমরা এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গুলিস্তান সিনেমা হলে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাই। সন্ধ্যা সাতটায় নাচ-গান আরম্ভ হলো। রাত নয়টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়। এই অনুষ্ঠানে আমি ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’ গানখানি পরিবেশন করেছিলাম। অনুষ্ঠান শেষে প্রতিটি শ্রোতা হলের বাইরে এসে থমকে দাঁড়ালেন। বাইরে আরম্ভ হয়েছে ঝম-ঝমাঝম বৃষ্টি। অথচ প্রেক্ষাগৃহে যখন সবাই ঢুকছিলাম, তখন ছিল তারকাখচিত নির্মল আকাশ। চৌ এন লাই ঢাকা পরিত্যাগের পূর্বমুহূর্তে বিমানঘাঁটিতে বলে গিয়েছিলেন, এ দেশের অনেক কিছুই হয়তো ভুলে যাবো, কিন্তু স্মৃতির মণিকোঠায় একটি চিত্র বহুদিন দাগ কেটে থাকবে; সেটা হচ্ছে- তোমাদের দেশের শিল্পী গান দিয়ে আকাশের পানি আনতে পারে।” বৈশাখের ওই গানটি প্রায় সব সময়ের জন্য বাঙালির বৈশাখ চেতনাকে ধারণ করে।
নববর্ষ বা বৈশাখ বিষয়ক কবিতায় কখনো কখনো ভিন্ন মাত্রার প্রকাশ ঘটেছে। পাকিস্তান আমলে কবিদের রচনায় বৈশাখ উপনিবেশ শাসিত বাংলাদেশে উপস্থিত হয়েছে মুক্তির উৎস হয়ে। সমাজ বদলের আহ্বানই ঔপনিবেশিক পর্বের নববর্ষ উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে দেখা দেয়। মিলিত বাঙালির সঙ্গচেতনায় ঔপনিবেশিক পর্বের নববর্ষ অভিষিক্ত হয় বিপ্লবের বীজমন্ত্র হয়ে। কবি মুস্তাফা আনোয়ারের ‘বৈশাখের রুদ্র জামা’; অনিল মুখার্জী ‘পহেলা বৈশাখ’; সমুদ্র গুপ্তের ‘বৈশাখ : একাত্তরে’ কবিতাগুলো যুগ-যুগান্তরে নতুন নতুন ভাবের উৎস হয়ে আবির্ভূত হয়েছে বাঙালি হৃদয়ে। দেশের বর্তমান দুরবস্থা থেকে উত্তরণের আশা নিয়ে আমাদের জীবনে আসুক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। বৈশাখ আমাদের কাছে আসুক দুরবস্থা উত্তরণের সৃষ্টিশীল বিকল্পের উৎস হয়ে। বাংলার জনগণই এ দেশের অগ্রযাত্রায়, উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে, বৈশাখী চেতনা বিস্তারে- শেষ প্রতিরোধ, পরম ভরসা।
পহেলা বৈশাখ মানে বাঙালির ঐতিহ্য-অণ্বেষা, পয়লা বৈশাখ মানে বাঙালির আপন শিকড়-অণ্বেষা। পহেলা বা পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনকে একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন হিসেবে না দেখে দেখতে হবে ঔপনিবেশিক আমলের মতো, রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে। রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে বিষ্ণু দে একটি কাব্যের নাম রেখেছেন ‘তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ?’ বিষ্ণু দে-র অনুসরণে আমাদেরও বলতে ইচ্ছা হয় ‘তুমি শুধু পহেলা বৈশাখ?’ না, পহেলা বৈশাখ কেবলই পহেলা বৈশাখ নয়। এ বৈশাখের বুকের ভেতরে আছে আগুন-প্রতিরোধের আগুন। কেবল সাংবাৎসরিক নববর্ষ উদযাপন নয়, ওই প্রতিরোধের আগুনসম শুভ প্রতিজ্ঞায় হোক পহেলা বৈশাখ উদযাপন-
এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।