একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দুই উপজেলার মানুষ

টাঙ্গাইল বাসাইল লিড নিউজ সখিপুর

স্টাফ রিপোর্টার।।

কত এমপি আইলো গেল, কেউ আর আমাগো কষ্ট বুঝলো না। কেউ আর কথাও রাখলো না। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এমপি হইলো কিন্তু আমরা সেতু পাইলাম না। তারপর শওকত মোমেন শাহজাহান এমপি হইলো, তার ছেলে অনুপম শাহজাহান জয় হইলো, সেও কথা রাখে নাই। আবার জোয়াহের এমপি হইছিল কথা দিয়েছিল সেও কথা রাখলো না, এখন আবার জয় এমপি হয়েছে। এখন কি আমরা সেতু পামু। ভোট নেওয়ার সময় সবাই অনেক কথা দেয় কিন্তু কোন কাম করে না। আমাদের জন্মের পর থেকেই এই নদী দেখতাছি। কোন সেতু হই নাই। এমন ক্ষোপ প্রকাশ করেই কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাঙ্গালীছেও গ্রামের কুলসুম বেগম (৫৩)।

 

নদীর এপার বাসাইল ওপারে সখীপুর। দুই পারের মানুষগুলোর মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। একই সংসদীয় আসন, শিক্ষা-দীক্ষা, বাজার-ঘাট, কেনাকাটাসহ সবই হয় এক সাথে। তবুও সারাটাজীবন তারা দুই পারের বাসিন্দা। টাঙ্গাইলের বাসাইল ও সখীপুর উপজেলাকে বিভক্তকারী বংশাই নদী। এ নদীর উপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ দুই উপজেলার প্রায় দুই লাখ জনসাধারণ। একটি মাত্র সেতুর অভাবে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসেনি এখনো।

 

জানা যায়, টাঙ্গাইলের বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার বুক বয়ে গেছে বংশাই নদী। বাসাইল উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের সুন্না বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদীর উপর কোন সেতু না থাকায় যুগ যুগ ধরে ভোগান্তির মধ্যে জীবন-যাপন করছেন দু’পাড়ের মানুষ। উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত সুন্না বাজার ঘেষে বংশাই নদীর উপর সখীপুর-বাসাইল সংযোগ সেতু নির্মাণ হলে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন ওই দুই উপজেলার মানুষ।

 

শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে একটি নৌকা পারাপারই একমাত্র ভরসা এলাকাবাসীর। এছাড়াও একটি হাট, একটি আলিম মাদ্রাসা, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি কিল্ডার গার্ডেন স্কুল থাকায় প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয় দুই উপজেলার বাসিন্দাদের। তাদের একমাত্র চলাচলের মাধ্যম বংশাই নদীর উপর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকা। অনেক সময় এই নদী পারাপারের জন্য বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ জনগণসহ শিক্ষার্থীদের।এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে ভারী কোন মালামাল, ভ্যান গাড়ি, মোটরসাইকেল পারাপার করতে না পারায় বিপাকে পড়তে হয় দু’পারের মানুষদের।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্না বাজার ঘেঁষে বংশাই নদীর উপর সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষজন। প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ বাসাইল- সখীপুরের হাজার হাজার জনসাধারণ ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে রোগী বহনের কোনো যানবাহন পারাপারেরও ব্যবস্থা নেই। সখীপুর উপজেলার কাঙ্গালীছেও, দাঁড়িয়াপুর, যাদবপুর, বেড়বাড়ী, প্রতিমা বংকী, শোলাপ্রতিমা, বোয়ালী, দেওবাড়ী, লাঙ্গুলিয়া, চাকলাপাড়ার গ্রামবাসীসহ উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। এছাড়াও বাসাইল উপজেলার সুন্না, গিলাবাড়ী, কল্যানপুর, কলিয়া, কাউলজানীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ ওই সড়ক দিয়ে পার্শ্ববতী সখীপুর উপজেলায় যাতায়াত করেন।

 

শিক্ষার্থী শিহাব শিকদার বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমাদের নৌকা দিয়ে পার হতে হয়। শুকনো মৌসুমে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ভয়ে ভয়ে পার হতে হই। একটি ব্রীজ হলে আর কোন ভয় থাকবে না সময়ও কম লাগবে। সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সরকারের কাছে দাবি এখানে একটা ব্রীজ চাই।

 

মাজেদুল ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ডুবে যায়। তখন নৌকা দিয়ে আমাদের পারাপার হতে হয়। প্রতিদিন মোটরসাইকেল এ-পারে রেখে ও-পারে যাই। এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে জানি না। সরকার দেশের কত উন্নয়ন করতেছে। যদি আমাদের দিকে একটু নজর দিত তাহলে আর দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

 

প্রতিদিন সুন্না বাজারে ঝাল মুড়ি বেক্রা করেন কাঙ্গালীছেও গ্রামের আরফান মিয়া বলেন, আমি প্রতিদিন সুন্না বাজারে এসে ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। ঝুঁকি নিয়ে শুকনো মৌসুমে  বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকা করে বাজারে আসি। আমরা খুব কষ্টে আছি। কত এমপি ও চেয়ারম্যান আইলো গেল কেউ আমাদের কষ্ট বুঝলো না। সরকারের কাছে দাবি আমাদের একটি ব্রীজ করে দেয়া হোক।

 

কাদের মিয়া বলেন, আমাদের কষ্টের শেষ নেই। দুই উপজেলার প্রায় ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু বংশাই নদীর উপর কোন সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকো আর নৌকা একমাত্র ভরসা। শিক্ষার্থীরা ঠিকমত বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেক জনপ্রতিনিধি আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু কেউ কোন কথা রাখেনি। আমরা চাই আমাদের সুবিধার্থে সরকার অতিদ্রুত এই নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করে দিবে। এটা হলে আমাদের জীবন-যাত্রার মান অনেক বেড়ে যাবে।

 

কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, আমি প্রতিদিন সুন্না বাজারে সবজি বিক্রি করি। বর্ষা মৌসুমে  নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হই। সময় মতো নৌকা না পেলে বাজারে যেতে বেশি সময় লাগে। যদি ব্রীজ হয় আমরা কৃষিপণ্য দিয়ে যথা সময় মতো বাজারে যেতে পারবো সময়ও কম লাগবে।

 

বাসাইল উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কোনো জায়গা থেকে অনুমোদন পাব বা পাচ্ছি এ-রকম কোনো অবস্থা নেই। ওই জায়গায় একটি ব্রিজ তৈরি হলে বাসাইল ও সখীপুর দুই উপজেলার মধ্যে সুন্দর যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান এমপি যখন এর আগে এমপি ছিলেন তখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সবার সার্বিক সহযোগিতা চাই। আমাদের বর্তমান এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান উদ্বিগ আছেন। তাদের সহযোগিতা নিয়ে যাতে এই ব্রিজটা আমরা করতে পারি বা একটি পরিকল্পনা দাখিল করতে পারি এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা আছে। আমি উদ্যোগ নেব।

 

তবে বাসাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম শুনিয়েছেন আশার কথা। তিনি দাবি করেছেন, ‘বর্তমান এমপি অনুপম শাহজাহান জয় একটি ব্রিজ অনুমোদন করিয়েছেন। আমরা আশাবাদী সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে এক-দেড় বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে। বর্তমান এমপি তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

 

 

৩২১ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *