সাদ্দাম ইমন ॥
টাঙ্গাইলের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় অর্ধমাস ধরে মৃদু থেকে মাঝারি এবং কোথাও তীব্র মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রোদে-গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে জনজীবন। বৈশাখের ঘামে-গরমে বয়স্ক ও শিশুদের অস্বস্তি চরমে উঠেছে। এই সুযোগে হানা দিচ্ছে বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন রোগবালাই।
তীব্র তাপপ্রবাহে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমে শিশুরা পেটের সমস্যা, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস ও অ্যালার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কিডনি রোগী ও বয়স্কদের হিট স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, শরীর জ্বালাপোড়া, পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, ত্বকের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি ও মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিসের অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক জামাল হোসাইন জানান, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মূলত বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভিড় করছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা বাড়ার সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাদের সামলাতে রীতিমতো চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম খেতে দেখা যায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ১২ দিনে মোট এক হাজার ৫৩৯ রোগী ভর্তি হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, দুর্বিষহ গরমে ঘরে-বাইরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্তদের চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। এছাড়াও জন্ডিস, হিট স্ট্রোক, সর্দিজ্বর নিয়েও হাসপাতালে আসছেন রোগীরা।
শিশু বিশেষজ্ঞ বেশকয়েক চিকিৎসকরা জানান, কয়েক দিন ধরে হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে। শিশুদের হঠাৎ জ্বর, গরমজনিত ঠান্ডা, পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, হাম, মাম্পস, পেটব্যথা, বমির মতো উপসর্গ নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন। এছাড়া গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম হলেও এবারও অনেক শিশু ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, অসহনীয় গরম এবং অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হচ্ছে। আবার বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়ায় তাপপ্রবাহের মধ্যে ঠোঁট শুকিয়ে ও ফেটে যায়। তীব্র গরমে শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, রিকশাচালক, কৃষক ও নির্মাণ শ্রমিকদের মতো শ্রমজীবী, স্থূলকায় ব্যক্তি এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন ব্যক্তিরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন।
তারা আরও বলেন, গরম থেকে রক্ষা পেতে পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরা, বাড়ির বাইরে থাকার সময় সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা এবং শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে অতিরিক্ত পানি ও শরবত পান করতে হবে। স্যালাইন পানিতে থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও চিনি শরীর সজীব রাখতে বিশেষভাবে কার্যকর। গ্রীষ্মকালীন ফলের তাজা জুস পান করা, মাংস এড়িয়ে বেশি করে খেতে হবে ফল ও সবজি। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।