স্টাফ রিপোর্টার ॥
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী (২১ মে) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মূলত আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সিদ্দিকী পরিবার আবির্ভুত হয়েছে। জম্পেস লড়াই চলছে প্রচারণার মাঠে। টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে আলোচিত সিদ্দিকী পরিবারের ভাইদের ছোটজন করটিয়া সা’দত কলেজের সাবেক শামীম আল মনসুর সিদ্দিকী ওরফে আজাদ সিদ্দিকী (আনারস) এবং আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোল্লার (মোটরসাইকেল) নির্বাচনী লড়াই ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। এ উপজেলায় বাংড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাসমত আলী নেতা (দোয়াতকলম) চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী থাকলেও তেমন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
আজাদ সিদ্দিকীর (আনারস) পক্ষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম বেশকয়েকটি এলাকায় নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়ে ভাইয়ের জন্য ভোট চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকী স্থানীয় সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিলেও ছোট ভাই আজাদ সিদ্দিকীর প্রতি সমর্থন রয়েছে বলে তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন।
কালিহাতী উপজেলার রাজনৈতিক বোদ্ধারা টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, সিদ্দিকী পরিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও সুসংহত করতে চাইছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সিদ্দিকী পরিবারের আধিপত্য রোধ করতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন।
কালিহাতীর রাজনীতিতে সিদ্দিকী পরিবারের বিশাল প্রভাব রয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে তাঁর পাশে ছিলেন ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকী ও আজাদ সিদ্দিকী। এবার আজাদ সিদ্দিকী তাঁর বড় দুই ভাইয়ের সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকী সরাসরি নির্বাচনের মাঠে না নামলেও নেপথ্যে থেকে ভাইয়ের জন্য কাজ করছেন। কাদের সিদ্দিকী একাধিক দিন কালিহাতীর বিভিন্ন এলাকায় ছোট ভাইয়ের পক্ষে গণসংযোগ করেছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী আজাদ সিদ্দিকী (আনারস) টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, কালিহাতীর প্রতিটি অঞ্চলের ভোটারদের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। প্রতিটি এলাকার মানুষ তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। ‘নিজের খেয়ে’ স্লোগানে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হওয়ার আশা রাখেন।
কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মোল্লা (মোটরসাইকেল) উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পক্ষের নেতারা তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। সাবেক সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনসার আলী, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবু নাসেরসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা আনোয়ার মোল্লাকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মোল্লা (মোটরসাইকেল) টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, নির্বাচনে তিনি দ্বিধা বিভক্ত আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে এক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন- এটাও তার জন্য এক প্রকার বিজয়। তিনি উপজেলার জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সুখে-দু:খে পাশে আছেন। এজন্য ভোটাররা তাকেই নির্বাচিত করবেন।
কালিহাতী উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান (টিউবওয়েল), আব্দুল্যাহ সরকার (চশমা), আব্দুল বারেক (উড়োজাহাজ), মাহমুদুল হাসান দীপুল (তালা) ও জমীর উদ্দিন আমেরী (বই)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা পরিষদের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রীনা পারভীন (প্রজাপতি) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ফাতেমা খাতুন বৃষ্টি (ফুটবল)।
১৩টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত কালিহাতী উপজেলায় ২০১৯ সালের গণনা অনুযায়ী মোট ভোটার তিন লাখ ১২ হাজার ১১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৫৫ হাজার ৪০৫ জন এবং মহিলা এক লাখ ৫৬ হাজার ৭০৭ জন।