
হাসান সিকদার ॥
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ বুধবার (২৯ মে) অনুষ্ঠিত হবে। টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এই তিন উপজেলা নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এই তিনটি উপজেলায় কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতিই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ হওয়ায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ ও ভিআইপি উপজেলা হিসেবে পরিচিত সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চারজন চেয়ারম্যান প্রার্থীই আওয়ামী লীগের। তারা হলেন- টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন মানিক (ঘোড়া), সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা (দোয়াত কমল), বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শামীমা আক্তার (আনারস), জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামস উদ্দিন (মোটরসাইকেল)। তবে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী (হেলিকপ্টার) তার কোন প্রচার প্রচারনা নাই।
দেলদুয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মারুফ (কাপ-পিরিচ), দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক (টেলিফোন), আটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মল্লিক (আনারস), খন্দকার হা মীম কায়েছ বিপ্লব (ঘোড়া), ইকবাল হোসেন মিয়া (মোটরসাইকেল), জুয়েল সরকার (হেলিকপ্টার) ও মতিয়ার রহমান মিয়া (দোয়াত-কলম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নাগরপুরে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুছ ছালাম (ঘোড়া), সালমান শামস্ (আনারস) ও হুমায়ুন কবির (মোটরসাইকেল)।
তবে সদর ও দেলদুয়ার এই দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। কাকে ভোট দেবেন সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। ভোটের মাঠে বিরাজ করছে উত্তেজনা। তবে প্রার্থীরা বলছেন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের পক্ষে কাজ করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। সাধারণ ভোটাররা টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, ধান কাটা মৌসুমে বাড়িতে ধানের কাজে ব্যস্ত সবাই। একজন শ্রমিকদের মজুরি এক হাজার টাকা। ভোট দিতে গেলে এক হাজার টাকা মাইর যায়। ভোট দিয়া আমাগো লাভ কি, নেতা খেতা গো লাভ হয়। নগদ টাকা পেয়ে ধান কাটাই ভাল। এইসব কারণে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম। আবহাওয়া অনুকুলে থাকা সত্বেও ভোটাররা ভোট দিতে যান না।
ভোটার মাকসুদ হক টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, মাঠে ধানের কাজ থাকায় ভোটার কম। কাজের ফাঁকে কেউ কেউ এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছে। ভোটের জন্য লাইন ধরতে হয় না, নির্বিঘেœ ভোট দেয়া যাচ্ছে। অন্য যে কোন সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোট দিতে এলে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইনে থাকতে হয়। এবার ভোটার কম থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মাঠে ধানের কাজ লেগেছে। আর ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের মতো নেই। একজন প্রার্থীর দলীয় সমর্থক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, নির্বাচনের প্রতিক পাওয়ার পর থেকে শত শত লোক, কর্মী-সমর্থক নিয়ে প্রতি দিন প্রচার প্রচারনা করে থাকি প্রার্থীর পক্ষে। মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে চড়ে রাত-দিন নির্বাচনী প্রচার করে থাকি। সেজন্য ওই প্রার্থী টাকা দেয়। কিন্তু ভোটের দিন দেখা যায় ওইসব লোক, কর্মী-সমর্থকরাই ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসে না।
ষাটোর্ধ্ব বয়সী দিপু ইসলাম টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, আগের মতো ভোট নিয়ে মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ না নেওয়ায় এবং দলীয়করণের কারণে সাধারণ মানুষ আর ভোট দিতে চায় না। অনেকেই মনে করেন ভোটের মূল্যায়ন হচ্ছে না। এটা ভালো লক্ষণ নয়। কথা হয় সাদেকুল ইসলামের সঙ্গে তিনি টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, ভোট দিতে যামু কিনা তাই চিন্তাভাবনা করছি। মন চাইলে যাব, মন না চাইলে যামু না। ভোট দিলেই কী, আর না দিলেই কী? একটা ভোটের জন্য কি সব থেমে থাকবে?
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত গত দুইটি নির্বাচন এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। প্রথম ধাপে ধনবাড়ী, মধুপুর। দ্বিতীয় ধাপে ভূঞাপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভোট কেন্দ্রগুলো ভোটার উপস্থিতি কম হলেও কেন্দ্রের বাইরে কর্মী সমর্থকদের সরব থাকতে দেখা গেছে। তবে প্রার্থীরা চেষ্টা করেন সবসময়ই ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে। এজন্য বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতেও দেখা যায়।