ভাঙা সেতু সাড়ে চার বছর ॥ ভোগান্তিতে ধনবাড়ীর ২৫ গ্রামের মানুষ

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল স্পেশাল ধনবাড়ী লিড নিউজ

মোহাম্মদ ইউনুস, ধনবাড়ী ॥
নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হয় সেতু। নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই ক্ষমতার প্রভাবে সেতুর গোড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ফলে চার বছর আগে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের ভাতকুড়া গ্রামের বৈরান নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ভেঙে যায়। এতে উপজেলা সদরের সাথে সেতুর পশ্চিম পাড়ের ২০ থেকে ২৫ গ্রামবাসী ভোগান্তিতে রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করলেও কোনো গুরুত্ব দেন না অভিযোগ গ্রামবাসীদের। তাদের দাবি, আবারও নতুন সেতু নির্মাণের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নামমাত্র নির্মাণ করা হয়েছিল সেতুটি। ধনবাড়ী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) বিষয়টি দেখেও এড়িয়ে গেছেন। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও তা কোনো কাজে আসেনি। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই উপজেলার প্রভাবশালী গ্রুপ অবৈধ ড্রেজিংয়ে সেতুর গোড়া থেকে বালু উত্তোলন করে। বালু উত্তোলন করায় সংযোগ সড়ক ও গাইড বাঁধ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার পানির স্রোতে সেতুর মাঝখানের পিলার পৃথক হয়ে যায়। ফলে সেতুটি ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। ধনবাড়ী এলজিইডি সূত্র টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানায়, পাইস্কা ইউনিয়নের বৈরান নদীর ওপর বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বিগত ২০১৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কাজটি পায় স্থানীয় এক প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাতকুড়া গ্রাম দিয়ে বয়ে গেছে বৈরান নদী। শুকনা মৌসুম হওয়ায় নদীতে কোমর পানি। পানিতে ভাসছে কচুরিপানা। নদীতে ভাঙা সেতুর অংশগুলো পড়ে আছে। পারাপারে নদীর ওপর নেই কোনো ব্যবস্থা। বালু উত্তোলনের ফলে পাড়ের বসতবাড়ি ও কৃষি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। স্থানীয়রা টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, এলাকার লোকজন বেশির ভাগই কৃষিজীবি। উৎপাদিত পণ্যগুলো উপজেলা সদরে নিয়ে যেতে হলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়। ভাতকুড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, সেতুটি নির্মাণের বছর দেড়েক পরেই এটি ভেঙে পড়ে। সেতুটি হয়ে মাত্র ১০ মিনিটে উপজেলা সদরে যাওয়া যেত। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পথ ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হয়। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় গ্রামবাসী ও স্কুল শিক্ষার্থীসহ লোকজন। অপর বাসিন্দা লিয়াকত আলী ও শিউলী বেগমের অভিযোগ জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করলেও কোনো গুরুত্ব দেন না। সাড়ে চার বছর ধরে সেতুটি ভেঙে পড়ে আছে। দুই পাড়ের যোগাযোগ সচল রাখতে তাদের দাবি, আরেকটি সেতু নির্মাণে। নদীগর্ভে বাড়ির আঙিনা ভেঙে চলে গেছে শমছের আলী, নেপাল চন্দ্র সরকার ও ঠান্ডু মিয়ার। তাঁরা টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, বর্ষা এলেই ভিটেবাড়ি ভেঙে নদীতে চলে যায়। এতে করে আমরা সহায়সম্বলহীন হয়ে যাব। ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, ওই সেতুর পূর্ব পাড়ে ভাতকুড়া এবং পশ্চিম পাড়ে দরিচন্দ্রবাড়ী গ্রাম। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০ থেকে ২৫ গ্রামবাসী সেতুটি দিয়ে চলাচল করত। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার ফলে কয়েক হাজার মানুষ দুভোর্গে রয়েছে।
এ বিষয়ে ধনবাড়ীতে নবনির্বচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, ভাঙা সেতুটি পরিদর্শন করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদাররা নয়-ছয় করে কাজ শেষ করবে, এটা আর মেনে নেওয়া হবে না। কাজ করতে চাইলে সঠিকভাবে কাজ করে জনগণকে তা বুঝিয়ে দিতে হবে। ‘এমপি’র সাথে কথা বলে সেখানেই আরেকটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ভাইস চেয়ারম্যান আবু তালেব মুকুল।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ধনবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম মন্ডল টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

২৫০ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *