স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর।।
আসন্ন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি না মানার অপরাধে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই অপরাধে উয়ার্শী ইউপির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
কারাদন্ড প্রাপ্তরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ এবং উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইশাদ আহম্মেদ মল্লিক নিশাত। শুক্রবার (৩১ মে) রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান এই আদেশ দেন।
জানা গেছে, আগামী ৫ জুন মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতারা দুটি প্যানেলে, বিএনপি সমর্থিত একজন চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। গত শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের সাফর্ত গ্রামের হালিম খান গজনবীর বাড়িতে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম মুজাহিদুল ইসলাম মনির (কাপ পিরিচ), ভাইস চেয়ারম্যান শওকত হোসেন (টিউবওয়েল) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা শাহরীন (কলস) এর উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠক শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে পিকআপ থেকে বিরানীর প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছিল। এমন খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান ওই বাড়িতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালান। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহল ও ছাত্রলীগ নেতারা ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারকের সাথে তর্কে জড়ান। এক পর্যায় বিচারকের সাথে থাকা আনসার সদস্যদের সাথে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এসময় নেতাকর্মীরা ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারককেও ধাক্কা দেন। ধাক্কাধাক্কিতে আশিকুর ও সোহেল নামে দুই আনসার সদস্যের প্যান্ট ছিড়ে যায় এবং তারা আহত হন। এছাড়া এঘটনায় আশিকুরের পরিচয়পত্রও খোয়া যায় বলে জানা গেছে।
এসময় ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারকের নির্দেশনা না মেনে ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহল, উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ ও উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইশাদ আহম্মেদ মল্লিক নিশাত উঠান বৈঠকে আসা কর্মী সমর্থকদের মাঝে বিরানীর প্যাকেট বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত এবং বিচারককে অবরোদ্ধ করে রাখেন। পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলমকে অবহিত করেন এবং সহযোগিতা চান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলম বিষয়টি জানতে পেরে রাত সোয়া আটটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেন।
এসময় ইউপি চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগের দুই নেতা ও ওই বাড়ির মালিককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ ও উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইশাদ আহম্মেদ মল্লিক নিশাতকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন।
এ খবর পেয়ে উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাত পৌনে একটার দিকে নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্ত¡র ত্যাগ করলে একটার দিকে কারাদন্ড প্রাপ্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে টাঙ্গাইল জেল হাজতে পাঠানো হয় বলে মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. করিম হোসেন জানিয়েছেন।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক মো. মাসুদুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬ ৩২(১) ধারায় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং একই ধারায় দুইজনকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।