স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের পুষ্টকামুরী গ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ বসবাস করলেও তারা একটি সমাজে পশু কোরবানি করে থাকেন। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে কোরবানির এই ধারাবাহিকতা চলছে। এ বছর গ্রামটিতে ৯১টি গরু ও ২১টি খাসি কোরবানি করা হয়েছে। এসব গরু ও খাশি থেকে ১২৮ মন ২০ কেজি গরু এবং ১০০ কেজি খাশির মাংস স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে গ্রামটির পাঁচ হাজার ২৫৫ জন মানুষের মধ্যে প্রত্যেককে ৭৫০ গ্রাম করে মাংস দেয়া হয়েছে। এছাড়া আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা আরো সহস্রাধিক দুস্থ মানুষের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করা হয়। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে গ্রামটিতে সামাজিকভাবে এক মাঠে পশু কোরবানি করে জনসংখ্যা হারে মাংস বিতরণ করা হচ্ছে বলে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা জানিয়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দা মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক ভিপি আবু আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল মামুন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শরিফুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি হযরত আলী মিঞা, সাধারণ সম্পাদক এস এম মহসীন টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আমরা পুষ্টকামুরী গ্রামবাসী সামাজিকভাবে এক মাঠে একত্রে কোরবানি করে আসছি। এ বছরও একইভাবে কোরবানি করেছি। কোরবানি করার জন্য গ্রামের লোকজনের আর্থিক সহায়তায় গ্রামের স্কুল ও মাদরাসার মাঠে বিশাল আকৃতির দুটি প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ শেষ করে সকলেই যার যার পশু নিয়ে মাঠে আসতে থাকেন। এ বছরও একইভাবে কোরবানি করা হয়েছে। পশু কোরবানির এক তৃতীয়াংশ মাংস নিজ দায়িত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে সামাজিক কাউন্টারে জমা করা হয়।
গ্রামটিতে এবার ৯১টি গরু ও ২১টি খাসি কোরবানি করা হয়। তাছাড়া গ্রামের বিভিন্ন বয়সের তিন শতাধিক মানুষ স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামের প্রায় ১১শ পরিবারের পাঁচ হাজার ২৫৫ জন মানুষের মধ্যে ৭৫০ গ্রাম করে মাংস বিতরণ করা হয়। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় সহস্রাধিক দুস্থ মানুষের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করা হয়েছে বলে গ্রামের লোকজন জানান। পরে অবশিষ্ট থাকা মাংস স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুইবারের সাবেক সভাপতি ও টানা চারবারের এমপি প্রয়াত একাব্বর হোসেনের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক দুই মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুর রহমান ও আ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি, পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু আহমেদ, পুষ্টকামুরী ক্লাবের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মোতালেব হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল মামুন, সাবেক দুই পৌর কাউন্সসিলর এস এম রাশেদ, আমিরুল কাদের লাবনসহ গ্রামের বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও গ্রামবাসী মিলে কোরবানির এ বৃহৎ আয়োজন সম্পন্ন করেন।
বিভিন্ন স্থান থেকে মাংস নিতে আসা কয়েকজন টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, এই গ্রামটিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস তুলেছি। আবার সমাজের মাঠে এসেছি। এখান থেকেও বেশ কিছু মাংস দেয়া হয়েছে আমাদের। আমরা অনেক খুশি। বিগত ২০০০ সালে মির্জাপুর পৌরসভা গঠিত হয়। একটি উপনির্বাচনসহ পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামটি থেকে প্রতিবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সালমা আক্তার। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ গ্রামটিতে বসবাস করলেও প্রতিবছর একমত হয়ে একসাথে পশু কোরবানির আয়োজন করে থাকেন বলে গ্রামটির বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান।