ধনবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান সবুজের ছোট ভাই বিএনপি নেতা মিন্টু কারাগারে

আইন আদালত টাঙ্গাইল ধনবাড়ী লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে সন্ত্রাসের মদদদাতা কামাল হোসেন মিন্টু তালুকদারের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৯ জুন) টাঙ্গাইল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক পশুপতি বিশ্বাস তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কামাল হোসেন মিন্টু তালুকদার হলেন- নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজের আপন ছোট ভাই। এছাড়া মিন্টু তালুকদার ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি এবং ধোপাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত (৪ এপ্রিল) বিএনপি নেতা কামাল হোসেন মিন্টু তালুকদারের নেতৃত্বে নরিল্যা গ্রামে ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ হীরার নির্বাচনী কার্যালয় ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং তার কয়েকজন নেতাকর্মীকে মারধর করে। এ ঘটনায় ওই গ্রামের চাঁন মিয়া বাদী হয়ে কামাল হোসেন মিন্টু তালুকদারসহ ১৫ জনের নামে মামলা করেন। স্থানীয়রা জানান, মামলার পর বিএনপি নেতা কামাল হোসেন মিন্টু তালুকদার উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন পেয়েছিলেন। গত (১৩ জুন) তার জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বুধবার (১৯ জুন) মিন্টু তালুকদার টাঙ্গাইল আদালতে উপস্থিত হয়ে আবার জামিন আবেদন করেন। বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, বিএনপি নেতা কামাল হোসেন মিন্টু তালুকদারের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী গত (৩ এপ্রিল) রাত পৌনে ১১টার দিকে ধনবাড়ির নরিল্যায় আরফান বাড়ী মোড়ে হারুনার রশিদ হীরা চেয়ারম্যানের নির্বাচনী অফিস, নরিল্যা পুরাতন বাজারে মনু মাষ্টারের বসতবাড়ী, দোকান ও নরিল্যা ক্লাব, নরিল্যা চৌরাস্তার উত্তর পাশে বাদীর মাছের আড়ৎতে বহু সন্ত্রাসীদের নিয়ে বসতবাড়ী ও নির্বাচনী অফিসে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। এরপর ওই সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে বেশকয়েকজনকে মারপিট করে। এছাড়া বাড়ীঘর, নির্বাচনী অফিস, মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। পরে এ ঘটনায় নরিল্যা গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে চাঁন মিয়া ওরফে চানু (৪০) ১৫ জনকে আসামী করে ধনবাড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার বাদী চাঁন মিয়া ওরফে চানু বলেন, নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজের আপন ছোট ভাই, উপজেলা বিএনপি সহসভাপতি কামাল হোসেন মিন্টু তালুকদার ধনবাড়ীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করেছে। তার এই সন্ত্রাসী কাজের যেন কঠিন শাস্তি হয় আমি এই আশা করি।
সন্ত্রাসীদের বিষয়ে ধনবাড়ী উপজেলার সাধারণ জনগন বলেন, শান্ত ধনবাড়ী অশান্ত হয়ে উঠেছে। মুখোশধারী আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত নেতারা ধনবাড়ী উপজেলাকে অশান্ত করে তুলছে। গত ১৫ বছরে এই উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিতে পারেনি। অথচ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে মুখোশধারী আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাদের ইন্ধনে ধনবাড়ীতে শুরু হয়েছে মারামারি। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একজন একজন করে পেটানো হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি, লোহার চেইন ও রড় দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করছে। এসব ঘটনায় ধনবাড়ী থানায় আহত দুইজন বাদি হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। এছাড়া ধনবাড়ীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী দফায় দফায় সংর্ঘষের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সর্বশেষ গত (৫ জুন) সকালে ধনবাড়ীর ধোপাখালীর নরিল্যা এলাকায় নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ ও তার ছোট ভাই উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি কামাল হোসেন তালুকদার মিন্টু’র নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনা ঘটিয়েছে। এরপর থেকেই পুরো ধনবাড়ী এলাকা থমথমে অবস্থা এবং আরো সংর্ঘষের আশংষ্কা করছে এলাকাবাসী। আহতদের স্বজনরা জানান, গত (৮ মে’র) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হারুনার রশীদ হীরার (ঘোড়া প্রতীকের) পক্ষে কাজ করার কারণে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল মার্কার নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজের লোকেরা অনেককে পিটিয়ে আহত করছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি কামাল হোসেন তালুকদার মিন্টু’র নেতৃত্বে একজন একজন করে পেটানো হচ্ছে। হাতুড়ি, লোহার চেইন ও রড় দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হচ্ছে। আহতরা হলেন- গোলাম মোস্তফা, বিজয়, চাঁন মিয়া, নূরুল হক, দুলাল হোসেন, মোবারক হোসেন, আব্দুল হাই ও তার ছেলে পারভেজ হোসেন, জামাতা আব্দুল গনি ও ভাই আব্দুল জলিল, ময়েন উদ্দিন, সোলাইমান। আহতরা সকলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। আহত গোলাম মোস্তফা জানান, নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ শপথ নিয়ে এলাকায় আসার দিনই কর্মি সমর্থকরা তাকে বরণ করে নেন। ধনবাড়ী উপজেলাতে মিছিল করে। পরে মিছিল শেষে নরিল্যা বাজারে এসে নতুন চেয়ারম্যানের ছোট ভাই উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মিন্টু তালুকদারের নেতৃত্বে বেলাল খা, বাহাদুর, আলী, আল আমিন অর্তকিত হামলা চালিয়ে আমাকেসহ আমার ছেলে ও শ্যালককে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে। স্থানীয় জনগন আমাদের উদ্ধার করে ধনবাড়ী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।
এসব বিষয়ে টাঙ্গাইল আদালতের সরকারি কৌঁসুলী (পিপি) এডভোকেট এস আকবর খান জানান, বিগত ২০০৬ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত কামাল হোসেন তালুকদার মিন্টুর বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলা হয়েছে। ধনবাড়ীর নরিল্যা গ্রামের মারামারির মামলায় বুধবার (১৯ জুন) হাজিরা দিতে আদালতে আসলে বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

 

 

 

 

 

 

৩০৭ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *