
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরপৌলি এলাকাতে যমুনায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। তীব্র ভাঙনে ইতিমধ্যে ৩৫ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এমন ভাঙনে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। নদী ভাঙনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙনরোধে জরুরি বরাদ্দের জন্য ঢাকায় আবেদন করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলার নাগরপুর থেকে সদর উপজেলার চরপৌলী পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার তীরে বাঁধ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, কালিহাতীর পাথরঘাট থেকে আলীপুর পর্যন্ত ব্লক ফেলে যমুনার তীরে বেড়ীবাঁধ করা হলেও মাঝখানে ১৬২৫ মিটার বাঁধ না থাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীরা টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, গত মঙ্গলবার আকস্মিক বাঁধের বাইরে ভাঙন শুরু হয়। এতে সবার ঘরবাড়িসহ গাছ পালা আসবাব পত্র যমুনা নদীতে মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায়। সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব নদী পাড়ের মানুষ। চরপৌলি গ্রামের আব্দুল কাদের জিলানি টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, তিন দশকে চারবার বাপ-দাদার ভিটে হারিয়েছি। গত মঙ্গলবার বিকেলে আকস্মিক ভাঙনে আমাদের ৬০ শতাংশ বাড়ি যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। সয় সম্বল হারিয়ে রাক্ষুসে যমুনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। আবাসস্থল ছাড়া সন্তানদের কোথায় রাখবো সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি। আমরা ত্রাণ চাই না, নদী ভাঙন থেকে রক্ষা চাই। চরপৌলি গ্রামের লালবানু বেগম টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, যমুনার ভাঙনে বাড়িঘর সরাতে সরাতে জীবন শেষ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার ভাঙনের পর দুই দিন যাবত আসবাব পত্র সরাচ্ছি। রান্নাও করতে পারিনি ঠিক মতো খেতেও পারিনি। ক্ষুধার যন্ত্রনায় ছোট ছোট নাতি নাতনিরা কান্না করছে। সরকারের কাছে দাবি আমরা ভাঙন থেকে বাঁচতে চাই।
একই গ্রামের হুনুফা বেগম টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, চোখের সামনেই ঘরের টিন, চেয়ার টেবিল ও গাছ পালা যমুনায় চলে গেলো। কিছুই রক্ষা করতে পারলাম না। আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা বাঁধ চাই। নিজেদের ভিটায় থাকতে চাই। সামাজিক সেবা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল হোসেন টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাঙন কবলিত এলাকার ঘর বাড়ি উদ্ধারে সহযোগিতা করি। গত মঙ্গলবার চোখের পলকে কয়েকটি ঘর চলে গেলো, তা রক্ষা করতে পারিনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, ৩০ বছর যাবত কাকুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যমুনার ভাঙন শুরু হয়। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার চরপৌলি গ্রাম যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে। গত মঙ্গলবারের ভাঙনে ৩৫ পরিবারের প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাকি বাঁধের কাজ শেষ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার তীরে বাঁধের কাজ করা হয়েছে। জেলার সদরের চরপৌলী, কালিহাতীর ভৈরববাড়ী ও আলীপুর এলাকার বাকি ১৬২৫ মিটার বাঁধের কাজের জন্য নতুন প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। আগামী শুকনো মৌসুমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আড়াই’শ কোটি টাকা ব্যয়ে চরপৌলি এলাকায় চায়না বাঁধের মতো বাঁধ নির্মাণ করা হবে।