রসালো ফলের সমাহার এখন টাঙ্গাইলের ফল বাজারে

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর লিড নিউজ

সাদ্দাম ইমন ॥
জ্যৈষ্ঠকে বলা হয় ফলের মাস। কারণ বেশির ভাগ রসালো ফল এ মাসেই বাজারে আসে। সুস্বাদু ফলের অধিক সরবরাহ থাকায় সবার কাছে মাসটি পরিচিত। বছরজুড়ে কমবেশি সব ফল পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এই সময়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন রসালো ফলের সমাহার এখন টাঙ্গাইলের ফল বাজারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আম, কাঁঠাল, লিচু, তাল, আনারস, জামরুল, জাম ইত্যাদি ফলের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। মৌসুম শেষ হলেও বেল, বাঙ্গি ও তরমুজ দেখা গেছে বাজারে। গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে বর্তমানে বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে আম ও লিচু। তবে দাম বেশি জানান ক্রেতারা। এছাড়া শহর ও শহরতলীর প্রায় প্রতিটি এলাকা ও ফুটপাতে ভ্যানে করেও মৌসুমি এসব ফল বিক্রি হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোয় ফল বিক্রি হচ্ছে বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে। ফুটপাতে ফল বিক্রি করা সামাদ খান টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, গ্রীষ্মকালে হরেক রকমের ফল পাওয়া যায়, যা অন্য সময়ে পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি থাকে। সেজন্য বেচাকেনায় তেমন একটা সুবিধা হয় না। এখন দাম মোটামুটি কম, কাস্টমারও বেশি। আমি খুচরা এক কেজি রুপালি আম ১২০ আর হিমসাগর ১১০ টাকায় বিক্রি করছি। লিচুর শত ৮০০ টাকা। শিপন নামে আরেক বিক্রেতা টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, সব ফলের চাহিদাই মোটামুটি ভালো। আম আর লিচুর চাহিদা একটু বেশি। বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। আমরা পাইকারি দাম থেকে প্রতি কেজি আমে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ করি। আর ১০০ লিচু বিক্রি করলে ৫০ টাকা লাভ হয়। বেচাকেনা বেশি হচ্ছে দেখে অল্প লাভেও দৈনিক ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। শহরের ফুটপাতে বসা এক ফল বিক্রেতার সঙ্গে দরদাম করছিলেন ছিদ্দিক সরদার নামে এক ক্রেতা। তিনি টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, দাম তুলনামূলক বেশি। আশা করি আরও কমবে। এখন যে আমের কেজি ১২০ টাকা, সেই আম সপ্তাহখানেক পর ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি হবে। ১০০ লিচু বিক্রি করছে ৮০০ টাকায়। ফল কিনতে আসা জাহিদ হোসেন টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, এখন ফলের সিজন, তাই দাম নাগালের মধ্যে। এজন্য চেষ্টা করি প্রতিদিনই পরিবারের জন্য ফল নিয়ে যেতে। বাসায় বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। সন্তানরাও ফল অনেক পছন্দ করে। বিশেষ করে আম ও লিচু। শুরু থেকেই লিচুর দাম বেশি, এখনও কমেনি। সবাই একজোট হয়ে এক দামে বিক্রি করছে। তবু কিনছি, কারণ এখন না নিলে পরে পাওয়া যাবে না।
এদিকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও গ্রীষ্মের বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আম। অনলাইনে আম বিক্রেতাদের একাংশ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন মৌসুমি ফল বিক্রি করেন তারা। তাদের একজন সালমান হাবিব। তিনি একটি স্বনামধন্য কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অনলাইনে আম বিক্রির বিষয়ে তিনি টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে আমি টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালাই। গত বছর মাথায় এলো এর পাশাপাশি কী করা যায়। আমার এক বন্ধুর বাড়ি সাতক্ষীরা। সে বললো, তাদের এলাকার হিমসাগর আম অনলাইনে বিক্রি করতে। প্রথমে তেমন সাড়া না পেলেও এখন ভালো বিক্রি হচ্ছে। লাভের বিষয়ে এই শিক্ষার্থী টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, গত এক সপ্তাহে আমি ২২০ কেজি আম বিক্রি করেছি। কেজি প্রতি হিমসাগর ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। বেশি আম কিনলে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। একসঙ্গে ২০ কেজির বেশি আম কিনলে কেজি প্রতি আরও ১০ থেকে ১৫ টাকা কম। তিনি টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, তবে হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে বাড়তি ১০ টাকা করে গুনতে হয়। বাগান থেকে সংগ্রহ করে মানুষের বাসায় পৌঁছে দিয়ে সব খরচ বাদে আমার কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা লাভ হয়। টিউশনির পাশাপাশি অনলাইনের এই ব্যবসা আমার বাড়তি আয়ের পথ তৈরি করেছে। সবকিছু মিলিয়ে আমি সন্তুষ্ট।

 

 

১৯৭ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *