টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা অগ্নিসংযোগ ॥ দফায় দফায় সংঘর্ষ

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর লিড নিউজ

হাসান সিকদার ॥
কোটা প্রথার সংস্কার ও সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসুচীর কমপ্লিট শাটডাউনের অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল শহরে ও নাগরপুর উপজেলায় আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের ওসি ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সময় পুলিশ তাদের দমনে ও ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০ টার পর থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে তারা কোটা বাতিলের দাবিতে শ্লোগান দিতে শুরু করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে টাঙ্গাইল শহর বাইপাস সড়কের দিকে রওনা হয়। পরে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাধা দিলে শহরের পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড, ভিক্টোরিয়া রোড, মেইন রোড, নিরালা মোড় এলাকায় দফায় দফায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিআরসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের সাথে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয় দফায় দফায়। হামলাকারীরা টাঙ্গাইল প্রধান ডাকঘরে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ বক্স ও গাড়ী ভাঙচুর করে। এছাড়া শহরের আশেকপুর এলাকায় একটি পুলিশের এ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় দুইজন সাংবাদিক ও পাঁচজন পুলিশসহ অন্তত ১৭ জন আহত হয়। আহত দুুই সাংবাদিক হচ্ছেন বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মোল্লা তোফাজ্জল হোসেন ও রূপালী বাংলাদেশের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মনির। এরপর আন্দোলনকারীরা শহরের বেশকয়েকটি সড়কে লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষিপ্ত মিছিল করে। এ অবস্থায় শহর জুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীদের সাথে যুক্ত হয়ে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের কর্মীরা দুপুর ২টার দিকে শহরের মেইন রোডে অবস্থিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কার্যালয়ে হামলা করে। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সকল আসবারপত্র রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান করছিল।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট খোরশেদ আলম টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় দুুপুরে তালাবদ্ধ ছিল। এ সময় বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের কর্মীরা তালা ভেঙে অফিস ভাঙচুর করে। তারা কার্যালয়ের আসবাবপত্র রাস্তায় এনে অগ্নিসংযোগ করে উল্লাস করে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালে নাগরপুর উপজেলা ছাত্র সমাজের ব্যানারে কোটা বিরোধী সমাবেশ নাগরপুর উপজেলা গেট থেকে মিছিল নিয়ে নাগরপুর সরকারি কলেজ গেটের সামনে গেলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর লাঠি চার্জ করে। পরে আন্দোলনরত ছাত্ররা নাগরপুর বাজারের সদর সড়কে মিছিল নিয়ে আসলে সেখানেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে। তৃতীয় দফায় ছাত্র-ছাত্রীরা তালতলা সড়কে ফের অবস্থান নিলে সেখানে পুলিশ ও ছাত্রদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় নাগরপুর থানার ইনচার্জ (ওসি) এইচ এম জসিম উদ্দিন আঘাত প্রাপ্ত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের লাঠি চার্জে আহত ছাত্ররা হলেন- প্রধান সমন্বয়ক জাহিদ হাসান, মিঠু, ফাহিম, রাফি ও সামিম আহত হয়। প্রধান সমন্বয়ক জাহিদ হাসান টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলাম। পুলিশ ও ছাত্রলীগ বিনা উস্কানিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর হামলা করে। এ হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেল ৩টায় ফের প্রতিবাদ কর্মসুচী পালন করা হবে।
ছাত্রদের উপর লাঠি চার্জ প্রসঙ্গে নাগরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এইচ এম জসিম উদ্দিন টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, আন্দোলনকারি ছাত্রদের মিছিল সরকারি কলেজ গেটের সামনে পৌছলে তাদের মিছিল না করতে ও শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হয়। আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা মিছিল করে বাজারে আতংক ছাড়ানোর ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার গোলাম সবুর টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে জানান, আহতদের মধ্যে ওসিসহ ৫ জন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো শিক্ষার্থী বা আন্দোলনকারীদের উপর টিয়ারশেল বা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়নি। তবে আজকের সংঘর্ষে বিএনপি-জামায়াতের বেশ কিছু বহিরাগতদের দেখা যায়। তাদেরকে ফেরাতে টিয়ারশেল-রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

 

১২৯ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *