মধুপুরে বন্য প্রাণীদের খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট

টাঙ্গাইল মধুপুর লিড নিউজ

হাবিবুর রহমান, মধুপুর ॥
ইতিহাসখ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবনে প্রচন্ড তাপদাহে বণ্য প্রাণীদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে। চলছে ব্যাপক তাপদাহ। গাছপালা কমে যাওয়ায় বনের পরিবেশ আগের মতো নেই। পরিবেশ বিদ্বেষী আগ্রাসী গাছ লাগানোর ফলে দিন দিন পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। দিন দিন শালবন উজাড় হচ্ছে। আর সেসব জায়গায় সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে গাছ লাগানো হচ্ছে। শালবনের লাল মাটির মধুপুর বনের পরিবেশ সম্মত গাছ হচ্ছে- শাল, সেগুন, জারুল, আমলকি, হরতকিসহ নানা দেশি প্রজাতি। আজুলি গাছের আজ দেখা মেলে না। অধিক ছায়া সমৃদ্ধ গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ভাবিয়ে উঠে বনের পরিবেশ। বনের মধ্যে সামাজিক বনায়নে বিদেশি প্রজাতির গাছ লাগানোসহ আনারসের চাষে ঝুঁকে পড়ার কারণে পরিবেশ আরো বিপন্ন হচ্ছে। কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জানিয়েছে, এসব আনারস, কলাসহ বিভিন্ন ফল ফসলের বাগানে রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ আরো মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শালবনের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা জলাশয়গুলোও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ভূমি খেকোরা এসব জলাশয় ভরাট করে কৃষি রাজ্যে পরিনত করছে। জলাশয়গুলো সারা বছর পানি থাকতো। বন্যপ্রানীরা এ বনের বাইদ জলাশয়ে জলের চাহিদা মেটাতো। গোসল করাসহ বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে। এখন জলাশয়গুলো ভরাটের ফলে এখন আর সারা বছর পানি পাওয়া যায় না। যার ফলে পানি সংকটে কষ্ট করছে বন্যপ্রাণীরা। বনের খাদ্য বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। জলাশয় বিলীন হচ্ছে। গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে বনের পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। এ সময়ে দেশে চলমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে কষ্টের মাত্রা বেড়ে গেছে প্রাণীকূলে।
গাছাবাড়ি গ্রামের আব্দুস ছাত্তার (৪৩) জানান, মধুপুর বনের অভ্যন্তরে চৌরাবাইদ, মুনারবাইদ, গুইলমারি, জিকুশি, শইলমারি, দিগলাকোনাসহ অনেক জলাশয় ছিল। সারা বছর পানি থাকত। বনের পশুপাখিরা গোসল করত। পানি পান করত। এখন এসব বাইদ বা জলাশয় ভরাট ও খনন করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফলে পাণীয় জলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ আদিবাসী কালচারাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, এক সময় মধুপুর বন গহীন অরণ্য ছিল। প্রচুর ঝোপঝাড় ছিল। ঝোপঝাড়ে পশুপাখি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেত। বনের মধ্যে জলাশয়ের পানিতে চলতো পশুপাখিদের জীবন। প্রাকৃতিক বন উজাড়, অপরদিকে সামাজিক বনে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। এজন্য তাপদাহে বন্যপ্রাণীদের কষ্ট বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বন বাড়াতে হবে। সামাজিক বনায়ন বন্ধ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, দিন দিন বন উজাড়ের ফলে বন্যপ্রাণীদের খাবার কমে গেছে। পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে। পশুপাখি আশ্রয় ও খাদ্য সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। মধুপুর বন উজাড় অবৈধ দখল বন্ধ করে সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক ধ্বংস বন্ধের দাবি স্থানীয়দের। প্রাকৃতিক বন রক্ষা পেলে বাড়বে ঝোপঝাড়। নিরাপদ আবাসস্থল ফিরে পাবে বন্যপ্রাণীরা। বাড়বে খাদ্যের যোগান। বনের দখল হওয়া জলাশয়গুলো উদ্ধার করে আগের মতো মুক্ত করে বন্যপ্রাণীদের জন্য অবমুক্ত করার দাবি স্থানীয়দের।
পরিবেশবাদী সংগঠন (বেলার) বিভাগীয় সমন্বয়ক গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। বৃষ্টি কমে যাচ্ছে। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করা দরকার। বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করতে হবে।
বন বিভাগের টাঙ্গাইল উত্তর সহকারী বন সংরক্ষক আশিকুর রহমান বলেন, মধুপুর মূলত উঁচু জায়গা তারপরও জাতীয় উদ্যানের গড়গড়িয়া বনবিথী রেস্ট হাউজের পাশে জলাশয়ে পানি রয়েছে এখানে বানররা পানি খেয়ে থাকে। তারমতে, পানীয় জলের সমস্যার চেয়ে খাদ্য সমস্যা বেশি। বনের জায়গা দখলের ফলে বনের পশুপাখিদের খাদ্য কমে গেছে। তারমতে, মধুপুর বনের বন্য পশুপাখিরা অনেকাংশে ভালো আছে বলে তিনি মনে করেন।

 

৬১ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *