হাসান সিকদার ॥
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে চাচা ভাতিজা খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহতের ছেলে বাদি হয়ে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) নাগরপুর থানায় ৮ জনের নামে ও অজ্ঞাত ২০/২২ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও দু’জনের উপর হামলা করে কুপিয়ে হত্যা করায় হত্যাকারীকে পিটিয়ে খুন করেছে স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে নাগরপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
জানা গেছে, নাগরপুর উপজেলার ধুবুরিয়া ইউনিয়নের পুর্বপাড়া গ্রামের মুকুল মিয়ার ছেলে আছাদুল ইসলাম ও বাঁশি মিয়ার ছেলে তালেব দু’জনে মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিল। উত্তরাঞ্চল থেকে তারা ইয়াবা এনে গ্রামে উঠতি বয়সী ছেলেদের কাছে বিক্রি করত। এছাড়াও দু’জনেই মাদকাসক্ত ছিল। ইয়াবার ব্যবসা নিয়ে দু’জনের মধ্যে মত পার্থক্য তৈরী হয়। ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে তৈরী হয় ব্যাপক বৈরী সম্পর্ক। এ ঘটনায় এলাকায় দু’জনের দু’টি গ্রুপের তৈরী হয়। এর আগেও মাদক ব্যবসা নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি ঘটনা ঘটেছে। আছাদুলের চাচাতো চাচা আব্দুস ছাত্তার ধান-চাল ও সরিষার ব্যবসা করেন। তিনি এরাকার অনেক বিচার শালিস করেন। তিনি দু’জনকে এর আগেও মাদক ব্যবসা বাদ দেওয়ার জন্য দু’জনকে শাসিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে মাদক ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে তালেব আছাদুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।
এ সময় চাচা আব্দুস ছাত্তার ও আজমল নামের অপর একজন আছাদুলকে বাঁচাতে আসলে দু’জনকে কুপিয়ে আহত করে তালেব। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আছাদুল ও ছাত্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। আজমলকে গুরুত্বর অবস্থায় মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা ঘাতক তালেবকে গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ধুবুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম খান শাকিল বলেন, হত্যাকারী তালেব ও আছাদুল দু’জনেই মাদকাসক্ত ছিল। মুলত মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্তার মিয়া অত্যন্ত ভাল লোক ছিলেন। ভাতিজাকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত ছাত্তারের ছেলে আরিফ হোসেন বলেন, আমার চাচাতো ভাই মাদকাসক্ত ছিল। গ্রামে মাদক নিয়ে দু’টি গ্রুপের তৈরী হয়। একটি গ্রুপের প্রধান তালেব। তার সাথে মাদক নিয়েই ঝামেলা হয়। রাতে হঠাৎ করে তালেব এসে ভাইকে কোপাতে থাকে। বাবা বাধা দিতে গেলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে। তালেব ছাড়াও যারা এই হত্যার ইন্ধন দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই।
নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচএম জসীম উদ্দিন বলেন, নিহত চাচা-ভাতিজা ও তালেবের লাশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) শরফুদ্দিন জানান, এ ঘটনায় নিহত ছাত্তারের ছেলে আরিফ হোসেন বাদি হয়ে ৮ জনের নামে ও অজ্ঞাত ২০/২২ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও গণপিটুনীতে নিহত তালেবের পরিবারের কেউ মামলা না করলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করবে।