হাসান সিকদার ॥
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে, প্রেতাত্মারা কিন্তু এখনো ঘোরাফেরা করছে। তারা বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা জনগণের প্রিয় দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে সর্ম্পৃক্ত রয়েছে। আমি পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, এই ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ হবে না। শহীদ জিয়ার সৈনিকেরা তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং তাদের রুখে দিবে। এতো অত্যাচার ও নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপি টিকে আছে। আজ আবার যদি জনগনের সাহার্য্য ও সমর্থন বিএনপির প্রতি অব্যাহত থাকে তাহলে আমরা সেই সম্ভাবনার বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সূতী ভি.এম পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাবেক উপমন্ত্রী এড. আব্দুস সালাম পিন্টুর মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ প্রধান অতিথি হিসেবে ভারচুয়ালি বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের সহকর্মী আব্দুস সালাম পিন্টুর মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশে সকলের নিকট দাবি রাখছি যে, আব্দুস সালাম পিন্টুসহ বিএনপির যত নেতাকর্মী যাদের নামে মিথ্যা মামলা ও আাটকে রাখা হয়েছে তাদের সকলের মুক্তি দাবি করছি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে কতগুলো প্রস্তাবনা রেখেছি জাতির সামনে। বিগত প্রায় ১৭ বছরের জনগণের আন্দোলনের ফলে, জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে গত ৫ আগস্ট। জনগনের বিজয়ের মাধ্যমে স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। স্বৈরাচার দেশ থেকে বিদায় হয়েছে। এখন আমাদেরকে দেশকে গড়তে হবে। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের সামনে দেশের রাজনীতির কিছু মৌলিক বিষয় পরিবর্তনের ৩১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছি। এগুলো আপনারা দেখেছেন। এরই মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এরই ভিতর আমরা উল্লেখ্য করেছি। আপনাদের আন্দোলনের মাধ্যমে যে স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় করেছি আমরা এই বিদায়ের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক যে বিজয় তার একটি অংশ অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের যে মূল লক্ষ্য জনগনের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার। যে আন্দোলন বিগত ১৭ বছরে ধরে একথা আমরা বলে আসছি। জনগনের সামনে যে কারনে, যেজন্য, যে লক্ষ্য হাসিলের জন্য আমাদের বহু নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন ও শহীদ হয়েছেন। বিএনপির বাহিরে অন্যান্য দলের বহু নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। যারা রাজনীতি করেন না, কিন্তু দেশকে ভালবাসেন। এমন বহু সাধারণ মানুষ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন পেশার মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন। এই যে আত্মত্যাগের কারণ কি? কারণ জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা। জনগন তাদের কথা বলবে। জনগন তাদের কথা অনুযায়ী কাজ হবে। এমন একটি ব্যবস্থা, যেটিকে গণতন্ত্র রাজনৈতিক ভাষায় বলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা ভোট ব্যবস্থা, জনগনের ভোট। শেখ হাসিনার ভোট নয়, স্বৈরাচার এরশাদের ভোট নয়। যে ভোট যুদ্ধের জন্য বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে সাথে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সংগ্রাম করেছে। যে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য বিএনপি জনগনকে সাথে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সংগ্রাম ও আন্দোলন করেছে। আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। সেই সাথে আমাদের অর্জন করতে হবে জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি। আমাদেরকে সেই সকল সম্ভাবনার দ্বারগুলোকে খুলে দিতে হবে। এই সম্ভাবনার দ্বারগুলো খুলে দিলে আমরা জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে সক্ষম হব।
এ সময় তারেক রহমান আরও বলেন, আমি সেইসব সম্ভাবনার কথা বলতে চাই ও তুলে ধরতে চাই। আগামী দিনে বিএনপি জনগনের সহযোগিতায় জনগনের সরকার গঠনে সক্ষম হলে আমরা বাংলাদেশে উৎপাদন, সম্ভাবনা ও উন্নয়নের রাজনীতি করতে চাই। সে কারণে বাংলাদেশের মাটিতে আমার মন পড়ে আছে। দেশের প্রতিটি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যেও পরিবর্তন করা সম্ভব। বিএনপির রাজনৈতিক লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের মানুষের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা। জনগনের যে অর্থনৈতিক মুক্তি, সেটি অর্জন করা। আপনাদের সাহায্যে ও সহযোগিতায় স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় করতে সক্ষম হয়েছি। আপনাদের সাহায্যে, সহযোগিতা ও সমর্থন পেলে আমরা সরকার গঠন করতে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারব।
তারেক রহমান আরো বলেন, টাঙ্গাইলের মাটির সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সরকার গঠন করলে টাঙ্গাইলের শাড়ি, চমচম, পাটজাত পণ্য, আনারস ব্যাপক হারে বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নেয়া হবে। বিভিন্ন জেলার সম্ভাবনা নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
গোপালপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম রুবেল। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান এড. আহমেদ আযম খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবালসহ জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপি'র বিভিন্ন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দুপুর গড়াতেই সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সূতী ভি.এম পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। লাখো কণ্ঠে একটাই দাবি উঠে মুক্তি মুক্তি চাই, সালাম পিন্টুর মুক্তি চাই। উল্লেখ্য, আব্দুস সালাম পিন্টু পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুঞাপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বিগত ২০০৮ সাল থেকে তিনি ষড়যন্ত্র মূলকভাবে জেলহাজতে বন্দী আছেন।