
স্টাফ রিপোর্টার ॥
উত্তাপ ছড়ানো সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে চাল, মাছ-মাংস, আলু, মসলাসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম এখনও চড়া। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপ কাজে আসছে না। বেশির ভাগ পণ্যই বিক্রি হচ্ছে বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে। ক্রেতারা সবজির বাজারে যেটুকু স্বস্তি পাচ্ছেন, তা উবে যাচ্ছে মাছ-মাংস কিনতে গিয়ে। ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, টাঙ্গাইলে নিত্যপন্যের বাজারে গেলে মাথা ঘোরে। গত সরকারের সিন্ডিকেট এখনও রয়ে গেছে বাজারগুলোতে। এই অসাধু সিন্ডিকেন্ট চক্র ভাঙতে হবে খুব দ্রুতই। তবেই ক্রেতারা ন্যাযতার ভিত্তিতে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে পারবে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইলের বেশকয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। কোথাও কোথাও ব্রয়লারের দর ২৩০ টাকাও হাঁকছেন বিক্রেতারা। কয়েক মাস ধরে গরুর মাংসের বাজারে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। কেউ ৬৫০, কেউ ৭০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছেন। এছাড়া বেশির ভাগ স্থানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। অথচ খুচরায় ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৭৫ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬২ ও গরুর মাংস ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বাজারে কক মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এ ধরনের মুরগির দর সরকার নির্ধারণ করে দেয়নি।
কিছু দিন আগেও মাছের বাজার ছিল খানিকটা স্থিতিশীল। এখন কিছুটা বাড়ছে। দর অনুযায়ী পাঙাশ প্রতিকেজি ১৮৯ এবং কাতলা মাছ ৩৫৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু এ দরে পাওয়া যাচ্ছে না। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি আকারের পাঙাশ প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৩০ ও চাষের কই ২৪০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি আকারের রুই প্রতিকেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং কাতলা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০, শিং ৩৫০ থেকে ৫৫০ ও পাবদা প্রতিকেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আলুর দাম আবার ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। সরকারি হিসাবে বিক্রি হওয়ার কথা প্রতিকেজি ২৯ টাকা। তবে দেশি পেঁয়াজ সরকার নির্ধারিত কেজি প্রতি ৬৫ টাকার চেয়ে কোথাও কোথাও কম দরে মিলছে। সবজির বাজারে উত্তাপ নেই। শিম ও বেগুন প্রতিকেজি কেনা যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। শসা ও টমেটোর কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দরও দুই সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে।
বাজারের সবজি ব্যবসায়ী এমদাদ মিয়া জানান, মোকামে দাম কমছে। বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি। খুচরা পর্যায়েও দাম কমছে। চালের বাজার চড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০ টাকা বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে চিকন বা মিনিকেট চাল প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৭৬, মাঝারি বা বিআর-২৮ ও পাইজামের কেজি মানভেদে ৫৫ থেকে ৬০ এবং মোটা বা গুটি স্বর্ণা বা চায়না ইরি চাল ৫০ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। এলাচ প্রতিকেজি ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। তবে দুই মাসের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা দরে। ফলের বাজারে নিম্নমুখী গতি রয়েছে। আপেল-মালটার দাম কমে প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা হয়েছে। তবে খেজুর আগের মতোই চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার থেকে ৩৩০ টাকা দরে সোনালি জাতের মুরগি কিনেছেন আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, সবজির দাম কমে আসায় আগের তুলনায় বেশি কিনতে পারছি। কিন্তু মাছ ও মুরগির বাজারে এলে যেন মাথা ঘোরে। এই বাজারে বিক্রয়কর্মী রিপন মিয়া বলেন, খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কিছুটা প্রভাব পড়েছে মুরগির দামের ক্ষেত্রে।