স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোসাল এ্যাডভান্সমেন্ট থ্রু ইউনিটি (সেতু) সহকারি হিসাবরক্ষকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। তার নাম হাসান আলী প্রামানিক। সে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার পুঠিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ প্রমানিকের ছেলে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে টাঙ্গাইল শহরে অবস্থিত সেতুর প্রধান শাখা সেতু টাওয়ারের পশ্চিম পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ সেতু কর্তৃপক্ষ তাকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ নিচে ফেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। তবে সংস্থাটির কর্তৃপক্ষের দাবি ৭তলা থেকে লাফ দিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিহতের মা সুফিয়া বেগম বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামী করে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সেতুর নির্বাহী পরিচালক মির্জা সাহাদত হোসেনের ছেলে উপ-পরিচালক (মানবসম্পদ) মির্জা সাকিব হোসেন, উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম, (সহকারি কর্মকর্তা আইন) শরিফুল ইসলাম, স্টাফ অফিসার রাশেদুল ইসলাম হৃদয় ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার খায়রুল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে।
জানা যায়, পাঁচ বছর আগে সেতু এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে যোগদান করেন হাসান। ভালো কাজের জন্য দুই বছর আগে সহকারি হিসাবরক্ষক পদে পদোন্নতি পান। ওই পদে জামালপুর সদরের পিয়ারপুর শাখায় কর্মরত ছিলেন। সেতু কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ওই শাখায় আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক ও সহকারি হিসাব রক্ষক তিনজনে যোগসাজশ করে সংস্থাটির প্রায় ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব ঘটনায় ওই তিনজনকেই ক্লোজ করে সেতুর প্রধান অফিস টাঙ্গাইলে নিয়ে আসা হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর তারা তিনজনই প্রধান অফিসে আসেন। কর্তৃপক্ষ তাদের অর্থ আত্মসাতের বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। হাসান টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন। শেষে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপককে ছেড়ে দিলেও ব্যবস্থাপক ও হিসাব রক্ষককে ৭ম তলার একটি কক্ষে আটকে রাখেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাসানের মা বাবাকে সেতুর প্রধান শাখায় ডেকে আনা হয়। তার মা বাবার সামনেই হাসানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। টাকা না দিলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে হাসানের বাবা। হাসানের মা বাবা সাতদিনের সময় নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। তখন থেকে দুজনকে সেতু টাওয়ারের ৭ম তলায় আটকিয়ে রাখা হয়।
হাসানের বাবা লতিফ প্রামানিক অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলে রেখে আত্মহত্যা বলছে। ১৮ তারিখে ছেলের সাথে কথা বলে গেলাম। সে আমাকে বলেছে কোন টাকা মারে নাই। আমি রিক্সা চালাই। অভাবের সংসার। আমাকে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে ফোন করে বলা হয় আপনার ছেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। আপনি আসেন। রাতে এসে আমার ছেলের লাশ দেখি। হাসানের চার বছরের হিয়া মনি নামের একটি মেয়ে রয়েছে। সে কেন আত্মহত্যা করবে। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।
হাসানের ফুফু বাহাতন বেওয়া বলেন, এক মাস আগে হাসান বাড়ি আসছিল। বলছিল ফুফু তোমাকেতো কিছুই দিতে পারি না। কারণ যে টাকা বেতন পাই খাইতেই সব ফুরিয়ে যায়। বেশি বেতন পেলে তোমাকে কিছু কিনে দেব। আমার সেই হাসান কোন ভাবেই মরতে পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
হাসানের ছোট ভাই আবুল হাশেম বলেন, আমার ভাই অত্যন্ত সততার সঙ্গে চাকুরী করতেন। আত্মসাত হয়ে থাকলে অফিসের অন্য কর্মকর্তারা করেছে। আমার ভাই বার বার অস্বীকার করেছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ আমার ভাইয়ের কোন কথাই শুনেনি। সে আত্মহত্যা করতে পারে না তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার পুর্নিমাগাতী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রউফ বলেন, হাসান অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহারের ছেলে ছিল। তার এই ভাবে মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছিনা। আমরা চাই তার হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক।
এদিকে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন টাঙ্গাইল সদর থানার উপপরির্দশক আরিফ রব্বানী। তিনি বলেন, মাথার বাম দিকে বুরুর উপরে গভীর কাটা ও ফাটা ছিল। এছাড়াও বামা হাতের কনুইতে চামড়া ছিলা পাওয়া গেছে।
সেতুর উপ-পরিচালক (প্রশাসন) বিমল বাবু বলেন, পিয়ারপুর শাখার ম্যানেজার ও সহকারি হিসাব রক্ষক দুইজনে যোগসজশে ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। এ ঘটনায় দুজনকে শহরের প্রধান শাখায় সংযুক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা টাকা আত্মাসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। অফিসের নিমার্ধানীন সাত তলায় তাদের থাকার জন্য একটি রুম দেওয়া হয়। সেখান থেকে লাফ দিয়ে হাসান আত্মহত্যা করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমেদ বলেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ম্যানেজার লিটন ও হাসানকে আটক করে রাখে সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে জানতে পারি হাসানের লাশ সেতু ভবনের পশ্চিম পাশে পাওয়া গেছে। আমরা লাশ দেখতে পাই টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে। পরে ময়না তদন্ত করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে।
হিসাবরক্ষকে হত্যার অভিযোগ সেতু এনজিও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ॥ গ্রেপ্তার পাঁচজন
৭২ Views