হাসান সিকদার ॥
কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনের (২৩) টাঙ্গাইলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা বলেন, ‘এমন মৃত্যু যেন আর কারো না হয়।’ একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিহত তানজিমের বাবা সারোয়ার জাহান দেলোয়ার প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ রকম মৃত্যু যেন আর কারো না হয়। আর যেন কোনো বাবার এভাবে আর্তনাদ করতে না হয়। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই। তানজিমই আমার একমাত্র ছেলে। সেই ছিল বাড়ির একমাত্র উপার্জন করার লোক। আমি এই হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার ও ফাঁসি চাই।’
এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিহত তানজিমের মা নাজমা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সরকার প্রধান ও সেনা প্রধানের কাছে আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। তানজিম ছিল আমার কলিজার টুকরা।’
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাদ আসর তানজিমের টাঙ্গাইল শহরের বোয়ালী মাদ্রাসা মসজিদে জানাজা শেষে বোয়ালী কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় সেনা, স্থানীয় প্রশাসন, আত্মীয়স্বজন ও এলাকার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
তানজিম নিহতের খবর এলাকায় জানাজানি হলে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই তাঁর বাড়িতে ভিড় করে আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসী। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এরইমধ্যে ঘাটাইল শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস থেকে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা নিহত তানজিমের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানিয়েছেন। এর আগে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারযোগের নিহত তানজিমের মরদেহ টাঙ্গাইল শহরের হেলিপ্যাডে নামে। সেখান থেকে লাশবাহী একটি এ্যাম্বুলেন্স করে তার লাশ শহরের বোয়ালী এলাকার নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত সেনা কর্মকর্তা তানজিমের বড় বোন আছে। তিনি ঢাকায় স্বামীসহ থাকেন।
জানা যায়, লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন টাঙ্গাইল জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী এই তরুণ সেনা কর্মকর্তা পাবনা ক্যাডেট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপনান্তে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে বিগত ২০২২ সালের (৮ জুন) আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।
আইএসপিআর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার অন্তর্গত ডুলাহাজরা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল দ্রুত যায়। আনুমানিক ৪টার দিকে মাইজপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করার সময় সাত থেকে আট সদস্যের একটি ডাকাত দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট তানজিমের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। এতে তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তানজিমকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, ঘটনাস্থল হতে ৩ জন ডাকাতকে আটকসহ ১টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ডাকাত সন্দেহে আরও ৩ জনকে আটক করা হয়। দেশমাতৃকার সেবায় এই তরুণ সেনা কর্মকর্তার আত্মত্যাগ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে এবং সেই সাথে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।