সাদ্দাম ইমন ॥
সমাজে এখন বহুবিদ টানাপোড়েন। নতুন নতুন সমস্যা সংকট দেখা দিচ্ছে। ধর্মের নামে সম্প্রদায়ের নামে বিভক্তি স্পষ্ট। তবে অযুত হতাশার মধ্যেই আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসছে শারদ উৎসব। আর মাত্র ক’দিন পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই প্রধান উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশে ‘ধর্ম যার যার/উৎসব সবার।’ ফলে সবার মধ্যেই এক ধরনের উৎসব প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পঞ্জিকা মতে, আগামী (৯ থেকে ১৩ অক্টোবর) শারদ উৎসব উদ্যাপিত হবে। আগামী (২ অক্টোবর) মহালয়া। এদিন দেবীপক্ষের সূচনা হবে। আগামী (৯ অক্টোবর) দেবীর বোধন এবং ষষ্ঠী পূজা। মহাষষ্ঠীর দিন থেকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আয়োজন শুরু হবে। এরপর মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী শেষে আগামী (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব। ফলে মন্ডপ মন্দিরকেন্দ্রিক প্রস্তুতিই বেশি চোখে পড়ছে এখন। টাঙ্গাইলের অধিকাংশ এলাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে এখন। এদিকে, প্রাক উৎসবের আকর্ষণীয় ছবি সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। এরই মাঝে উৎসবের রঙে সেজে উঠেছে। গিয়ে দেখা যায়, জমজমাট পরিবেশ। গলির দুই ধারে গায়ে গা লাগানো দোকান। দোকানিরা সবাই পূজার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। চলছে প্রতিমা তৈরি ও রং করার কাজ। আগে থেকে অর্ডার নিয়ে মাটির প্রতিমা বানাচ্ছেন শিল্পীরা। পূজার আগে এসব প্রতিমা টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। প্রতিমা সাজাতেও অনেক শাড়ি, গহনা ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। তবে সবই পাওয়া যাচ্ছে সরু গলিতে।
পূজার সময় বিবাহিত নারীরা নতুন করে শাঁখা গড়িয়ে নেন। তাদেরই একজন অনিন্দিতা। ছোট্ট একটি দোকানে গাদাগাদি করে বসে শাঁখা পছন্দ করছিলেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে বললেন, নতুন বিয়ে হয়েছে আমার। পূজাতে গ্রামের বাড়ি যাব। তাই আগেভাগে শাখা কিনতে এসেছি। শাখা ছাড়া আসলে পূজার সাজটা পরিপূর্ণ হয় না। সময় নিয়ে পছন্দ করবেন। তাই স্বামী অফিসে যাওয়ার পর নিজে একা এসেছেন বলে জানান তিনি। মার্কেট, শপিংমলগুলোতেও চলছে পূজার কেনাকাটা। নতুন জামা, জুতা, শাড়ি, পাঞ্জাবি ইত্যাদি কিনতে দেখা যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। সামনের দিনগুলোতে আতঙ্কের মেঘ কেটে গেলে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে একটি বুটিক শপের কর্ণধার মুরসালিন বিথুন বলছিলেন, উৎসবের কেনাকাটা আরও আগে শুরু হয়েছে। যারা গ্রামের বাড়িতে যাবেন তারা কেনাকাটা প্রায় সেরে ফেলেছেন। সামনের দিনগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় আরও বড় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কেনাকাটার পাশাপাশি পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন উৎসবপ্রেমীরা। প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঠাকুর দেখে কাটাবেন তারা। দলবেঁধে একেক দিন একেক এলাকার পূজা দেখতে যাবেন। ধর্মীয় আচারের পাশাপাশি মন্ডপগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সংগীত- নৃত্যসহ নানা পরিবেশনায় ছড়িয়ে পড়বে উৎসবের রং। মন্ডপের বাইরে ফুটপাতে ফাঁকা জায়গায় ছোটখাটো মেলার আয়োজন করা হবে। মেলায় লোক ও কারুশিল্পের উপস্থাপনা চোখে পড়বে। মুড়ি মোয়া নাড়ুর পসরা বসবে। সব মিলিয়ে বর্ণিল এক উৎসবের অপেক্ষা।