
বিভাস কৃষ্ণ চৌধুরী ॥
বাঙালি যে উৎসবপ্রিয় সে কথা তো বলাই বাহুল্য। তবে গত কিছুদিনের ঘটনাবলী বেশ হতাশার। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা অসহিষ্ণুতা বেড়ে গেছে। দেখা দিয়েছে নানা অনিশ্চয়তা। উৎসব অনুষ্ঠান কিছু আর হচ্ছিল না। এই যখন অবস্থা তখন বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে ওঠার নতুন বার্তা দিচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব সামনে রেখে টাঙ্গাইল জেলায় এক ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য চোখে পড়তে শুরু করেছে। প্রতিমা তৈরি, মন্ডপ সাজানোর কাজ হচ্ছে সবখানে। চলছে বিচিত্র কেনাকাটা। একই সময় খোলা আকাশের নিচে আয়োজন করা হবে শরত উৎসবের। নাগরিক এই আয়োজন থেকেও ভাগাভাগি করে নেয়া হবে পূজার আনন্দটুকু। সব মিলিয়ে দারুণ মুখরিত হয়ে ওঠবে চারপাশ। হ্যাঁ, এমন আশা মনে জাগতে শুরু করেছে।
পঞ্জিকা মতে, আগামী (৯ থেকে ১৩ অক্টোবর) সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইল জেলায় একযোগে উদযাপিত হবে শারদ উৎসব। এর অংশ হিসেবে আগামী (৯ অক্টোবর) দেবীর বোধন এবং ষষ্ঠী পূজা। মহাষষ্ঠীর দিন থেকেই শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী শেষে (১৩ অক্টোবর) বিজয়াদশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। চলছে রং করার কাজ। অচিরেই মন্ডপগুলো উৎসবের কেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠবে।
এদিকে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখন ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায়। মার্কেটে শপিংমলে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কথা হয় সঞ্জিত পালের সঙ্গে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। নিজের জন্য পাঞ্জাবী কিনতে এসেছিলেন। কেনাকাটা প্রসঙ্গে তার বক্তব্য: প্রতি বছর পূজার সময় বাসার সবার জন্যই নতুন পোশাক কেনা হয়। এবার সত্যি বলতে একটু দেড়ি হয়েছে। আমাদের গ্রামে কিছু সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তখন মন একেবারে খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু এখন পূজার সময় ঘনিয়ে আসায় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। বাবা-মা, ছোট ভাই, আত্মীয়-পরিজনের জন্য জামা-কাপড় কিনেছিলাম আগেই। এখন নিজের জন্য কিনতে এসেছি। এখন উৎসবটা নিশ্চিন্তে উদযাপন করতে পারব।
অবশ্য পূজা উপলক্ষে এরই মাঝে অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ছে উৎসবের আমেজ। দোকানিরা সবাই পূজার পসরা সাজিয়ে বসেছেন। প্রতিমা সাজানোর শাড়ি গহনা থেকে শুরু করে পূজার সব ধরনের উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে। অরুণ দত্ত বলেন, আমাদের এখানে পূজা করার জন্য যা যা প্রয়োজন প্রায় সবই পাওয়া যাচ্ছে। নারীদের জন্য নতুন নতুন ডিজাইনের শাখা পলা গড়েছি আমরা। প্রতিমার সাজ সজ্জাসামগ্রীও আছে। ক্রেতারা এসব বেশি কিনছেন। সব ঠিক থাকলে পূজার দিন পর্যন্ত বেচা কেনা চলবে বলে জানান তিনি।