হাসান সিকদার ॥
মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, এবারের পূজাটা যেন নতুন বাংলাদেশের পূজা হয়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে কিছু থাকতে পারে না। এখানে আমরা সবাই একটা পরিবারের মানুষ। আমরা এখানে কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ এটা নিয়ে কোন বৈষম্য হবে না। আমরা ঈদে আনন্দ করবো, পূজায় ভয়ে থাকবো এটা হয় না। আমাদের পূজায় কেন ভয়ে থাকবে হবে। পুলিশ দিয়ে আনসার দিয়ে পাহাড়া দিয়ে পূজাটাকে আনন্দময় করবো এটা তো হয় না। এটা আসলেই আনন্দের জিনিস। হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলে আমরা আনন্দ করতে পারি। সেজন্য সামাজিকভাবে পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যেন সবাই আনন্দটা করতে পরি। সবাই যদি চেষ্টা করি তাহলে অবশ্যই ভালো একটা পূজা করতে পারবো।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সবাই উজ্জীবিত হয়েই কিন্তু আন্দোলনটা তুঙ্গে উঠেছিল। অনেকে মনে করেন এটা ছাত্রদের আন্দোলন। কিন্তু না এটা ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল। সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সাধারণ দিনমজুরের বাচ্চা ছেলে ১৪-১৫ বছরের ছেলে সে আবু সাঈদের ভিডিও দেখে নাকি রাস্তায় নেমে গেছে, মা গেলাম বলে রাস্তায় মেনে গেছে। তিনি আন্দোলনে শহীদদের সংখ্যা সম্পর্কে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যে তালিকা করেছি ৮-৯’শ বলা হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য হিসাবে দেখা যায় যে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। তার অধিকাংশই তরুণ ছেলেরা আমাদের সন্তানেরা প্রাণ দিয়েছে। কাজেই যে অন্তর্বতীকালীন সরকারটা গঠিত হয়েছে সেই সরকারের কিছুটা দায়িত্ব যদি আমরা নিয়ে থাকি। আমরা যারা উপদেষ্টা আছি, আমরা দায়িত্ব যেটা নিয়েছি। এজন্য আমাদের কর্তব্য অনেক বেশি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত আমাদের পাশে থাকার কারণে নাম ধরতে হয়। বাংলাদেশ হল ইলিশ মাছের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আমাদের কোস্টগার্ড নৌবাহিনী খুব সর্তক অবস্থানে রয়েছে। এবার তারা আরও সর্তক অবস্থানে রয়েছে। ইলিশ মাছ চোরাচালানও হয়। স্থলপথেও কিন্তু ইলিশ মাছ চোরাচালান হয়। সবক্ষেত্রেই বিজিবিসহ সবাই সর্তক অবস্থানে রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাদেরকে অনুরোধ করবো পুজা চলাকালে বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন না হয়। যদি কোনো কারণে সমস্যা হয়- তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ সময় তিনি জামাতের নামাজের সময় মাইক বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হকের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সানতু, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শিহাব রায়হান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এএম জহিরুল হায়াত, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুন ঝন্টু, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কালীমন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক জীবন কৃষ্ণ চৌধুরী, সদর উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন সরকার, সাধারণ সম্পাদক দীলিপ কুমার দাস, ভূঞাপুর উপজেলা শাখার সভাপতি স্মরণ দত্ত প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় জেলা ও ১২টি উপজেলার পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর তিনি বিকেলে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার বিষ্ণুপুরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উবীনীগ কার্যালয়ে যান। পরে একই উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের স্থানীয় পুজা মন্ডপগুলো পরিদর্শন করেন।