টাঙ্গাইল জেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফারুকের ইন্তেকাল

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর মির্জাপুর রাজনীতি লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, গণপরিষদের সাবেক সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দীর্ঘদিনের বর্তমান সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জননেতা ফজলুর রহমান খান ফারুক শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের থানাপাড়ায় নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পরে দ্রুত তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং রাজনৈতিক সহকর্মীসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থান জামে মসজিদে (বেবিস্ট্যান্ড) শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে বাদ আছর ৫টার সময় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন। এরপর থেকেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
জানা যায়, ফজলুর রহমান ফারুক ১৯৪৪ সালের (১২ অক্টোবর) টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শী ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আব্দুল হালিম খান ও মা ইয়াকুতুন্নেছা খানমের আট সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয় ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মাষ্টার্স পাস করেন। তার স্ত্রী’র নাম সুরাইয়া বেগম, তিনি মারা গিয়েছেন। তিনি এক পুত্র মির্জাপুর আসনের সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ এবং এক কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।
ফজলুর রহমান ফারুক ১৯৬০ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। বিগত ১৯৬২ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বিগত ১৯৭০ সালে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭০ সালের গণ পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বাকশাল গঠিত হলে টাঙ্গাইল জেলা বাকশাল এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বিগত ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের (১৭ আক্টাবর) পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিগত ২০১৭ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। বিগত ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি একাধিকবার টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের প্রশাসক ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বিগত ২০২১ সালে একুশে পদক প্রদান করেন। ফজলুর রহমান ফারুক বিগত ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল মহকুমা প্রেসক্লাব এবং টাঙ্গাইল মহকুমা মফস্বল সংবাদদাতা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মরহুম ফজলুর রহমান ফারুকের মৃত্যুতে তার ছেলে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ তার ফেসবুকে জানান, আমার পিতা নানাবিধ রোগে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। বাধক্যজনিত কারণে তার এই মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী, টাঙ্গাইলবাসি, আমার পরিবারের সদস্যসহ সকলের নিকট আমার বাবার বিদেহী আত্মার জন্য সকলের নিকট দোয়া কামনা করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন আমার পিতাকে উনার জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়ে জান্নাতবাসী করেন। তার এই মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

 

 

৮৬ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *