নাগরপুরে নারী আইনজীবীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ ॥ মামলা দায়ের

আইন আদালত টাঙ্গাইল নাগরপুর লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শামীমা আক্তারকে (৫১) বেধরক মারধর ও শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি (১ অক্টোবর) টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ভারারিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা আইনজীবী শামীমা আক্তারকে উদ্ধার করে নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় আইনজীবী শামিমা আক্তার গত (৮ অক্টোবর) নাগরপুর থানায় একটা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামীরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম (৬০), হাসান (৪০), তন্ময় (২২), রায়হান (২৩) ও আশরাফ (৪৩)। তারা আইনজীবী শামিমা আক্তারের আপন চাচাতো ভাই ও ভাতিজা।
মামলার বাদী আইনজীবী শামীমা আক্তার জানান, প্রধান আসামী সিরাজুল ইসলাম বিগত ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় আমার বাবার কাছ থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়। গত (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নাগরপুর উপজেলার বনগ্রাম ব্রিজের উপর সিরাজুলের সঙ্গে দেখা হলে পাওনা টাকা ফেরত চাই। এ সময় সে টাকার ধার নেওয়ার কথা অস্বীকার করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং খুন-জখমের হুমকি দেয়। প্রতিবাদ করলে আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এতে আমার মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হই। গায়ের কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। সিরাজুল পরে হাসান, রায়হান, তন্ময় ও আশরাফকে ডেকে আনে। তারা এসে আমার গলা টিপে ধরে এবং লাথি, কিল-ঘুষি দিয়ে আমাকে ব্রিজের উপর ফেলে দেয়। এ সময় আমার ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
শামীমা আরও জানান, আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে গত (২০ অক্টোবর) আমার নতুন একটি স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেয় এবং রাজমিস্ত্রিদের ভয়ভীতি দেখায়। এতে আমি এবং আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ঘটনার পর সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে কুলসুম বেগম নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মাগরিবের আজানের পরপর বাঁচাও, বাঁচাও বলে একজন নারীর চিৎকার শুনতে পাই। দৌড়ে গিয়ে দেখি শামীমাকে মারছিলো সিরাজুল। এই ঘটনা আমি যেন কাউকে না বলি সেজন্য আমাকে এবং পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায় এলাকার কিছু লোকজন। তারা বলে পুলিশের কাছে সাক্ষী দিলে পুলিশ টাঙ্গাইল ধরে নিয়ে যাবে। তাই আমরা ভয়ে এখন চুপচাপ আছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী এক ব্যক্তি বলেন, ঘটনার সময় আমার স্ত্রী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনা সত্য এবং অনেকেই দেখেছেন। ঘটনা যাই হোক, একজন নারীর গায়ে হাত তোলা কোনভাবেই ঠিক হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও এসআই আবদুল মতিন বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকজনের সাক্ষ্য নিয়েছি। আরও কয়েকজনের সাক্ষ্য বাকি আছে এবং মেডিক্যাল সার্টিফিকেটটি হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। জামিনে থাকা আসামিরা স্থাপনা নির্মানে বাধা দিতে পারে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনা শোনার পর আমি এবং এসআই সায়েম সেখানে যাই এবং ঘটনার সত্যতা পাই। বাবু এবং আশরাফ নামে দুই ব্যক্তি স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিয়েছে বলে জানতে পারি। পুলিশ সবসময় অভিযুক্ত আসামীর জামিনের বিপক্ষে অবস্থান করে। তবে কাউকে জামিন দেওয়া না দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। তিনি আরও বলেন, কোর্টের আদেশ কিংবা রায় ছাড়া কেউ কারো দখলীয় সম্পত্তিতে অনুপ্রবেশ কিংবা স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিতে পারে না। এক্ষেত্রে যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নির্মাণ কাজ বন্ধের জন্য বিজ্ঞ আদালতে নিষেধাজ্ঞার আদেশের নিমিত্তে পিটিশন দায়ের করতে পারে।
এ বিষয়ে মামলার অভিযুক্ত প্রধান আসামী সিরাজুলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোনটি ধরেননি।
এ ব্যাপারে নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ভিকটিমের লিখিত অভিযোগের পর ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয় এবং প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। বাদী যাতে ন্যায়বিচার পান সে ব্যাপারে আন্তরিকতার সাথেই কাজ করবো।

৫২ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *