হাবিবুর রহমান, হালুয়াঘাট থেকে ফিরে ॥
যেখানে পাহাড় আর আকাশের গভীর মিতালী, ঝর্ণা ঝরছে স্বমহিমায়। মেঘের ভেলায় সবুজের ঝলকানি। দূর থেকে চোখে পড়ে পাহাড়ের উপড়ে সবুজের মাঝ দিয়ে সিঁথি করেছে কাঁকড় রঙের লালচে মাটি। বন্য হাতির বিলি দেয়া চিরুনির আঁচড়ে বানানো এক পিচ্ছিল মসৃণ সরু পথ। পাহাড়ের নিচে স্বচ্ছ জলের নিরিবিলি বয়ে চলা। কলকল উচ্ছ্বাসে নিরবধি আগন্ত্য ছুটে চলা। ওপার ভারতের পাহাড় টিলা। নিচে দিয়ে সীমানা গড়েছে গারো পাহাড়। বিপরীত শব্দের উঁচু নিচুর যেন স্বচোখে ধরাশায়ী। বুঝে নেওয়ার সক্ষমতা ঢেড় টের পাওয়া যায়। চোখ ক্রমাবর্ধমান গতিতে ছুটে চলে দিগন্তে। পাহাড়ের ওপারে দেখার ব্যাকুল বাসনা তাড়িত করে। এপাশ ওপাশ করে ঘুরে ফিরে। জ্যামিতিক গতি তীর্যক। প্রশ্ন করে বার বার ওপারটা কেমন? প্রকৃতির নৈপুণ্যতা দারুন। সৃষ্টির রূপ রহস্য বিন্যাসে যেন স্তরে স্তরে বিন্যস্ত। পর্যটকদের মনের খোরাক জোগায়। রহস্যের ঘোর টেপ জানার সাধ জাগে বৈচিত্র্যের নৈঃশব্দে। পুরো সীমানা দেখতে প্রায় সমশ্রী। ন্যাড়া নয় এ সময়ে সবুজের ছাউনি। বর্ষায় রূপে ফিরে আসে লাবণ্যতা। বলছিলাম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তে গারো পাহাড়ের কথা।
হালুয়াঘাট হলো ময়মনসিংহের সর্ব উত্তরের একটি উপজেলা। এ উপজেলার পুরো উত্তরের সীমানা ভারতের সাথে মিলে গেছে। স্থানীয়রা সীমান্ত এ পাহাড়কে গারো পাহাড় বলে থাকে। ভারতে ও এপারে গারোদের বসবাস বলে গারো পাহাড় নামকরণ হয়েছে। ভারতের অংশ উঁচু-নিচু টিলা-পাহাড়ে ঘেরা। বাংলাদেশেরও কোথাও কোথাও টিলা-পাহাড়ের ভাঁজ এসে মিশে গেছে। যে কারণে পর্যটকদের কাছে বাড়তি আর্কষণ গারো পাহাড়। পাহাড়ের সাথে মেঘের ভেলা ছুটে চলা অপূর্ব দৃশ্য। পাহাড়ের নিচে বসতি। ঝরনাধারা কৃষি ফসলের সবুজ মাঠ। নৃতাত্তি¦ক জনগোষ্ঠী গারোদের বসবাস। তাদের বৈচিত্র্যময় জীবন দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ছুটে আসে।
এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকলেও বর্তমানে সীমান্ত সড়ক মেল বন্ধন সৃষ্টি করেছে। সহজেই সড়ক পথে হালুয়াঘাটে আসা যায়। শহর থেকে গারো পাহাড় বেশি দূর নয়। পাকা সড়কেই যাওয়া যায় সীমান্ত দেখতে। স্থানীয় কানিবক পাড়া নলকুড়া কয়েক নৃতাত্তি¦ক জনগোষ্ঠী লোকজন জানালেন, হালুয়াঘাটের স্থল বন্দর গোবরাকুড়া পর্যটন পার্কসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গারো পাহাড় দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা লোকজন বেড়াতে আসে। ঘুরে যান ময়মনসিংহের সর্ব উত্তরের জনপদ হালুয়াঘাট। তাদের মতে, গারো পাহাড়ের আর্কষণ প্রকৃতি প্রেমিদের কাছে টানে। সীমান্ত সড়কের কারণে হালুয়াঘাট থেকে শেরপুর ও জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ পর্যন্ত পাকা সড়কে সোজা সড়ক পথে ঘুরা যায়। যে কারণে বিশাল সীমানা জুড়ে পুরো গারো পাহাড় দেখার সুযোগ মেলে।
সরেজমিনে হালুয়াঘাট থেকে গারো পাহাড়ের কাছে সীমান্ত সড়কের পথ ধরে যেতে দেখা গারো পাহাড়। যাওয়ার পথে সড়কের বাম দিকে চোখে পড়ে উঁচু পাহাড়। পাহাড় টিলা ভারতের হলেও দেখা সুযোগ মিলে এ দেশের প্রকৃতি প্রেমীদের। পাহাড় যেন আকাশের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সড়ক পথে যেতে যেতে দেখা যায় পাহাড়ের উপর সবুজের অরণ্য। সড়কে যানবাহন চলাচল কম।মাঝে মাঝে দু’একটা ছোট বড় বাহন চোখে পড়ে।
স্থানীয়দের দাবি মূল সড়কের বাইরেও সীমান্ত ও গ্রামে প্রবেশের সড়কগুলো পাকাকরণের। সড়কগুলো পাকা হলে সীমান্ত সড়কের সাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মান্দি গারো বসতি গ্রামগুলোর সাথে একটা সেতুবন্ধন তৈরি হবে। যোগাযোগ বেড়ে যাবে দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে। সহজেই স্থানীয় বসতির গারো সম্প্রদায়ের লোকজনেরা সহজেই যেতে পারবে তাদের গন্তব্যে। ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটবে। বাড়বে পর্যটকের সংখ্যা। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে স্থানীয়দের। এমনটাই জানালেন তারা।