আদালত সংবাদদাতা ॥
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আটক করা হয়। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে টাঙ্গাইল সদর থানায় নেওয়া হয়। সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে এবং একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ছোট ভাই।
টাঙ্গাইল সদর থানার (ওসি) তানবীর আহাম্মেদ বলেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সহিদুর রহমান খান মুক্তি গত (২২ সেপ্টেম্বর) টাঙ্গাইল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন। পরে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) মামলার ধার্য তারিখে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে করে টাঙ্গাইল আদালতে এসে হাজিরা দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাজিরা শেষে দুপুর ১২টার দিকে হুইল চেয়ারে করে আদালত কক্ষ থেকে তাঁকে বের করা হয়। এ সময় আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। পুলিশ আগেই সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে বহন করে আনা অ্যাম্বুলেন্সটি আদালত ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। পরে সহিদুর রহমান খান মুক্তি আবার আদালত কক্ষে ফিরে যান। বেলা সোয়া তিনটার দিকে তিনি আবার হুইল চেয়ারে করে আদালত কক্ষ থেকে বের হন। আদালত চত্বর থেকে বাইরে আসার পর টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশের একটি দল তাকে ঘিরে ধরে পুলিশের আনা কালো মাইক্রোবাসে উঠতে বলে। সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে পুলিশ তাকে আটকের কথা জানায়। কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জিজ্ঞাসা করলে ওসি তানবীর আহাম্মেদ তাকে বলেন, আমাদের সাথে চলেন, সব জানানো হবে।
বিগত ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সহিদুর রহমান খান মুক্তির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর বিগত ২০২০ সালের (২ ডিসেম্বর) আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে না মনজুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত। পরে বিগত ২০২২ সালের (১০ ফেব্রুয়ারি) জামিন পেলেও সেই জামিন বাতিল করে আদালত। এরপর বিগত ২০২৩ সালের (২০ নভেম্বর) উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে গত (২২ নভেম্বর) কারামুক্ত হন তিনি। পরে আদালত তার জামিন বাতিল করলে পরদিনই আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যান। গত (২৮ আগস্ট) তিনি আবারও জামিন পান।
বিগত ২০১৩ সালের (১৮ জানুয়ারি) জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ। বিগত ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ এ হত্যায় জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তাঁদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যাকান্ডে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাই জড়িত বলে বের হয়ে আসে। পরে বিগত ২০১৬ সালের (৩ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এতে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, সহিদুর রহমান খান মুক্তি, জাহিদুর রহমান খান কাকন, সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা করা হয়। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি আইনজীবী মনিরুল ইসলাম খান জানান, মামলাটির শুধু তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। অন্য সব সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির নামে বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে। সে কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনিপ্রক্রিয়া শেষে আপনাদের সব কিছু জানানো হবে।