স্টাফ রিপোর্টার, মির্জাপুর ॥
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গ্রামবাংলা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনিক্যাল কলেজ গবড়ার প্রিন্সিপালের স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মীয়করণ ও দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে কলেজ চত্ত্বরে উপজেলার সমন্বয়ক ও কলেজের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এছাড়া তিনজন সমন্বয় গত (৩০ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড: ওয়াহেদ উদ্দিন মাহমুদ বরাবর একটি আবেদনপত্র দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আবেদনপত্র সূত্রে জানা গেছে, কলেজে অধ্যয়নরত উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শৈশব আহমেদ উপদেষ্টা বরাবর প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্রটি লিখলেও উপজেলার তিনজন সমন্বয় স্বাক্ষর করেছেন। অভিযোগপত্রে নিয়োগ, আত্মীয়করণ ও দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। অধ্যক্ষ নিজের মেয়ে ও ভাতিজাকে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার পক্রিয়াসম্পন্ন করেছে বলে উল্লেখ রয়েছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) কলেজের বিজ্ঞান ল্যাব সহকারি পদে নিয়োগ পরীক্ষার দিন ধার্য ছিলো। এ পদে ১৭ জন প্রার্থী আবেদন করেন। বোর্ড আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ১১ জনকে পরীক্ষায় অংশ নিতে অনুমতি দেন। পরীক্ষা শুরুর আগেই শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকালে সমন্বয়ক, স্থানীয় বিএনপি, ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। বিক্ষোভ শেষে কলেজ চত্ত্বরে মহেড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মান্নান রানা, উপজেলার সমন্বয়ক ইমন সিদ্দিকী, জুুনায়েদ ইসলাম নিঝুম ও আজমান আহম্মেদ বক্তৃতা করেন।
ল্যাব সহকারি খাদিজা আক্তার বলেন, কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করতে অন্য জমি ব্যাংকে লিখে দিয়ে ঋণ নিয়ে কলেজের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখেছি। আমরা সারাজবিন চাকরিতে থাকবো না। তবে প্রতিষ্ঠান থাকবে। শুধু কলেজ নয়, পাশেই মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য আমার পরিবার ১০ শতাংশ লিখে দিয়েছে।
কলেজের প্রভাষক সামছুজ্জামান বলেন, শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিজ্ঞান ল্যাব সহকারি পদে নিয়োগ পরীক্ষার দিন ধার্য ছিলো। নিজেদের জমিতে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে বিনাবেতনে ১৭ বছর চাকরি করেছি। বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শৈশব আহমেদ মিথ্যে অপবাদ দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে শুনেছি।
প্রভাষক ইসমত আরা বেগম বলেন, আমার পরিবার সরকারের নামে ১০০ শতাংশ জমি লিখে দিয়ে ২০০৪ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিগত ২০১৯ সালে এমপিও হলেও ২০২১ সাল থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। দীর্ঘ ১৭ বছর বিনা বেতনে কলেজে শিক্ষকতা করেছি। অনেকেই শিক্ষকতা করে সংসার চালাতে পারেননি। তারা পাশাপাশি অন্য পেশায় নিয়োজিত থেকে টাকা উপার্জনের মাধ্যমে কলেজে টিকে আছে।
কলেজের অধ্যক্ষ আরহাদ আলী বলেন, পরিবারের সদস্যরা জমি দান করে অজপাড়া গাঁয় কলেজ, মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিক করেছেন। বিগত ২০০৪ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠিত করলেও বিনা বেতনে দায়িত্ব নেয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা এলাকায় এলাকায় ঘুরে ছাত্র ভর্তি এবং বিনাবেতনে লেখপড়া করিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীর ফরম পুরণের টাকাও পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। ১৭ বছর পর কলেজটি এমপিও হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে আমরা চলে যাবো। কিন্তু প্রতিষ্ঠান থাকবে। বিধি মোতাবেক নিয়োগ এবং কলেজ পরিচালিত হবে। এলাকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ এবং কর্ম করার পথ তৈরি হয়েছে। এলাকার সবার সহযোগিতায় কলেজটি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।