পাথরাইলে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিমুলের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার

টাঙ্গাইল দেলদুয়ার লিড নিউজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
শিমুলের পরিবারের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একদিন সেনাবাহিনীর সৈনিক হবেন। সেই আশায় বুক বেঁধে প্রবল আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। কিন্তু এখন তার সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। কারণ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে গত ৪ আগস্ট পুলিশের গুলিতে আহত হন শিমুল। পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়াতে সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকরি হবে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে তার পরিবারের।
গুলিবিদ্ধ শিমুল টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোর গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে। তিনি পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গত বছর এসএসসি পাস করেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়।
শিমুল বলেন, ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট আমার বন্ধুদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেখানে টাঙ্গাইল শহরে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে বিকালে ১০ মিটার দূর থেকে আমাদের ছাত্রদের উদ্দেশ করে গুলি করে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর সব বন্ধুকে হারিয়ে ফেলি। আমার দুই পায়েই গুলিবিদ্ধ হই। বিশেষ করে বাঁ পায়ে গুলি লাগাতে রাস্তার মধ্যে পড়ে থাকি। আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজন আমাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে করে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তখন আমার মনে হয়েছিল আমি আর বাঁচব না। কোনো দিন এমন বিপদে পড়েনি, তাই ভয়ে অনেক কিছুই মনে হয়েছিল। আমার শরীরে কোমরের নিচে ৫৫টি ছররা গুলি ছিল। তার মধ্যে চারবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গুলিগুলো বের করেছি। এখনও আমার ডান পায়ে ৫টি ছররা গুলি আছে। গুলির ব্যথায় আমার কোনো কিছুই মনে হয় না, কারণ দেশ স্বাধীন হয়েছে। কষ্ট একটিই আমার পরিবারের স্বপ্ন ছিল আমি সেনাবাহিনীতে চাকরি করব। আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল।
শিমুলের বাবা শহীদ মিয়া বলেন, আমার চার সন্তান। মাইক ভাড়া করে বিভিন্ন জায়গাতে প্রচারের কাজ করে দিন এনে দিন খাই। এভাবেই আমার সংসার চলে। এর মধ্যে চার সন্তানকে লেখাপড়া করিয়ে স্বপ্ন দেখছি।
আমার বড় স্বপ্ন ছিল বড় ছেলেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি করাব। কিন্তু আন্দোলনে সব স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে গেল। আমি হতদরিদ্র মানুষ। আমার স্ত্রী, আর চার ছেলেসন্তান নিয়ে আমরা পরিবারের ৬ জন। মাইক একদিন প্রচার হলে ৫ দিন প্রচার হয় না। অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতে হয়। আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য ধারদেনা করে অনেক কষ্টে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছি। ছেলের চিকিৎসা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনো দান-অনুদান সরকারের পক্ষ থেকে পাই নাই। আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে তাতে ওর ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল ছিল। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়ে তার ভবিষ্যৎ জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল। এজন্য সরকারের কাছে চাওয়া আমার ছেলের যোগ্যতা অনুযায়ী যেন একটি চাকরি দেয়।
শিমুলের চাচা জাকির হোসেন বলেন, শিমুল দেশ স্বাধীন করার জন্য টাঙ্গাইল আন্দোলনে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে গুলি খাইছে; পায়ের মধ্যে আহত হয়েছে। অনেক দিন হাসপাতালে ছিল। দৌড়াদৌড়ি করছে, অনেক টাকা খরচ হইছে, সরকার একটু সহযোগিতা করলে সে হয়তো আরও ভালো হবে। তার ভবিষ্যৎ ভালোর জন্য সরকার যদি একটি চাকরি দেয়, তাহলে তার মা ও বাবা নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সুলতান মাহমুদ বলেন, পাথরাইল উত্তর পাড়ার মধ্যে একদম নিরীহ মানুষ। এরা কোনো ঝুট ঝামেলায় যায় না। কোটা আন্দোলনে বন্ধুদের সঙ্গে শিমুল অংশগ্রহণ করেছিল। এতে তার পায়ে ছররা গুলিতে জায়গায় জায়গায় ঝাঁজরা হয়ে গেছে। সে দুই পায়েই গুলবিদ্ধ হয়। তার মধ্যে এক পায়ে বেশি।

 

 

৬৬ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *