
স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের লাল মাটির মধুপুর গড় বৈচিত্র্যময় ফল ফসলের জন্য উর্বর কৃষি অঞ্চল হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। এ মাটিতে এক দিকে রয়েছে শালবন, অন্যদিকে রয়েছে দেশি-বিদেশি কৃষি ফসলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ। মিশ্র ফসলের নিবিড়তা বেশি। আনারসের বাগানকে এ অঞ্চলের কৃষকরা মিশ্র ফসলের চাষ হিসেবে নিরাপদ ও অধিক লাভজনক মনে করেন। ফলে এক সাথে মিশ্রভাবে আদা, পেঁপে, কড়ল্লা, সর্বিকলা, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, ক্যাসাবাসহ নানা কৃষি ফসল চাষ করে থাকে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মধুপুরে চলতি অর্থ বছরে পেঁপে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৭৫ হেক্টর। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৩৫-৪০ মেঃ টন। পেঁপে বাজারজাত করণের জন্য পেপার ও গাছে বস্তা দিয়ে পেঁপে মোড়ানো হয়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর যাবত উন্নতজাতের টপ লেডি পেঁপে চাষ করছে বাণিজ্যিকহারে। কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। অধিক লাভ করতে একদিকে উন্নতজাত, অন্যদিকে কম খরচে চাষ। পেঁপে চাষটাকে মিশ্র ফসলের তালিকায় প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিচ্ছে কৃষকরা। আনারসের বাগানে সাথী হিসেবে পেঁপে চাষ করে গুণছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
আবার পতিত জমিতেও চাষ হচ্ছে। খরচ কম লাভ বেশি পেতে গাছে পেঁপে ধরার পর প্লাষ্টিকের বস্তা দিয়ে পুরো গাছ মুড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে সতেজ টাটকা। এ কারনে সময়ও পাচ্ছে আশানুরূপ। পরিবেশ বান্ধব নিরাপদ হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা কমছে না। অন্যদিকে পাকার পর পরিবহনের সময় রঙ সতেজতা ও নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে খবরের কাগজে মুড়িয়ে মোকামে পাঠানো হচ্ছে। ফলে পেঁপে এ অঞ্চলের লোকের চোখে মুখে হাসি ফোটাচ্ছ। অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে চাষী, কৃষক, পাইকার, আড়তদারসহ সংশ্লিষ্টরা। সমৃদ্ধ হচ্ছে লাল মাটির কৃষি অঞ্চল। এসব তথ্য কৃষক চাষি পাইকার ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
মধুপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সময়ে গড়ের লাল মাটিতে সোনা ফলতে। এক জমিতে এক সাথে কয়েকটি ফসল চাষ করছে কৃষকরা। এজন্য অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে সহজ হচ্ছে। শালবন এলাকায় সামাজিক বনায়নের বাগানে বন বিভাগের রোপিত গাছের জমিতে আনারস চাষ করেছে। এ বাগানের লম্বা লাইনে লাগাচ্ছে উন্নত জাতের টপলেডি পেঁপে। সাথে কেউ কেউ আরো অন্যান্য ফসলও করছে। অরনখোলা, বেরিবাইদ, শোলাকুড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন বন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আনারসের বাগানে সাদা সাদা বস্তায় মোড়ানো পেঁপে গাছ। ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় সতেজ পেঁপে। এমন দৃশ্য প্রায় মধুপুর জুড়েই চোখে পড়বে। এতে রোদে পুড়ে নষ্ট হয় না। পাখি-পোকামাকড়ের আক্রমনের হাত থেকে রক্ষা হচ্ছে।
পীরগাছা এলাকায় বাগানে পেঁপে পরিচর্চা অবস্থায় কৃষক মোস্তফা, কামাল, হারেসসহ অন্যান্যরা জানালেন, সে সামাজিক বনায়নের আট বিঘার একটি জমি চাষের জন্য চুক্তি নিয়েছে। জমিতে আনারসের সাথে পেঁপে চাষ করছে। এখন বিক্রিও করছে। তারমতে, প্রতি কেজি পেঁপে মোকামে ৪০-৫০ টাকা দামে বিক্রি করছে। পেঁপে তোলার পর বাগানের পাশে রাস্তার ধারে বসে বসে খবরের কাগজ দিয়ে মোড়াচ্ছেন পেঁপে। তার ধারনা প্রায় লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। খরচ হয়েছে ১ লাখের মতো। পেঁপে চাষ বর্তমানে লাভজনক বলে তিনি জানান। চাষী মজিবর জানালেন, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরা না হয় তাহলে পেঁপে চাষে সফলতা আসবেই। তবে খরার সময় গাছে সেচ দিতে হয়, পরিচর্যা করতে হয় নিয়মিত। প্রতিটি গাছে বাঁশের খুঁটি দিতে হয়, খরচও অনেক বেশি।