শীতের হাওয়া কুয়াশা শিশির সূর্যালোকে অপরূপ প্রকৃতি

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল স্পেশাল বিনোদন লিড নিউজ

সাদ্দাম ইমন ॥
কুয়াশা ভেদ করে সকালের মিষ্টি রোদ তীর্যকভাবে এসে গায়ে পড়ছে। শীতের অপরূপ এই আগমনী দৃশ্য শীতটা রীতিমতো টের পাওয়া যাচ্ছে এখন। কিছুদিন আগেও অস্বস্তিকর গরম ছিল। গ্রীষ্মে গরম, শরতে, এমনকি বর্ষায়ও গরম। বিভিন্ন মাত্রার গরম মানুষের আরাম কেড়ে নিয়েছিল। ফলে শীতের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সবাই। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। টাঙ্গাইলে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। হ্যাঁ, পৌষ মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। তবে তার আগের ঋতু হেমন্তের হাত ধরেই শীত নামে বঙ্গে। এখন সে সময়টাই চলছে। হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিক নিয়ম মেনে একটা পূর্বাভাস দিয়েছিল। আর দ্বিতীয় মাস অঘ্রাণে এসে কমে গেছে রোদের তীব্রতা। অন্যদিকে শিশিরের পরিমাণ বেড়েছে। বিস্তৃত হয়েছে কুয়াশার চাদর।
প্রাকৃতিক পরিবর্তনগুলো আমলে নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী নভেম্বরের শেষ দিক থেকে হালকা ঠান্ডা অনুভূত হয়। ডিসেম্বরের শুরুতে তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভোরে কুয়াশা পড়া, তাপমাত্রা ধীরগতিতে কমে আসা এবং বাতাসে শুষ্কতা শীতের আগমনের প্রাথমিক লক্ষণ। সে অনুযায়ী এখন টাঙ্গাইল জেলায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে নদী অববাহিকা এলাকায় কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও অনেক কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
অবশ্য আবহাওয়া অফিস বলার অনেক আগেই শীত নেমেছে। বরাবরের মতোই সেখানে রাজত্ব করছে শীত। গত সাতদিনে গড়ে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। যত গ্রামীণ জনপদ, সবখান থেকেই শীতের প্রকোপ বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ভোরে তো বটেই, রাতে এবং সন্ধ্যা বেলায়ও শীতবস্ত্র গায়ে দিয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে মানুষ। দেখে মনে হচ্ছে পুরোদমে নেমে গেছে শীত। অবশ্য টাঙ্গাইল শহরে শীত ঢোকার ক্ষেত্রে অযুত বাধা। অতো সহজে ঢুকতে পারে না। যান্ত্রিক নগরীতে বিচিত্র পন্থায় গরম উৎপাদন হয় শুধু। তবে এই অঘ্রাণে উষ্ণতা হার মানছে। জায়গা করে নিয়েছে শীত। শীত যে এসেছে- প্রকৃতিতে সে বার্তা স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতবস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। কারও গায়ে হালকা সোয়েটার, কেউ পড়েছেন কোট। হাফহাতা শার্টগুলো ফুলহাতা হয়ে গেছে। এভাবে নাগরিকরা যেন স্বীকার করে নিয়েছেন শীতের উপস্থিতিকে। বরণ করে নিয়েছেন এখন রাতে, বিশেষ করে শেষরাতে ভালো ঠান্ডা পড়ছে। বৈদ্যুতিক পাখা মোটামুটি বন্ধ। কাঁথা গায়ে জড়িয়ে নিতে হচ্ছে। ঘুমটাও হয়ে উঠছে উপভোগ্য। আর সকাল? বলা যায়, সবচেয়ে সুন্দর। সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আছে? থাকলে আশেপাশে ঘুরে আসতে পারেন। দেখবেন পায়ের নিচের প্রতিটি ঘাস শিশিরে ভেজা। গাছের পাতায়, ফুলের পাপড়িতে বিন্দু বিন্দু শিশির। সেখানে সূর্যের আলো এসে পড়তেই হিরার টুকরোর মতো চিক্চিক্ করছে। কুয়াশাও দেখা যাচ্ছে অনেক বেলা পর্যন্ত। সূর্যকে যেন আটকে রাখছে কুয়াশা। কুয়াশা ভেদ করে আসতে পারলে পরে দেখা যাচ্ছে সূর্যালোক। সকালে তীর্যকভাবে পড়তে থাকা রোদ কুয়াশাকে আরও স্পষ্ট করছে। কুয়াশাও যেন খেলা করছে সকালের সূর্যরশ্মিতে। কবিগুরু লিখেছিলেন, শীতের হাওয়ার লাগল নাচন…। সেই নাচন উপভোগ করার সময় এসেছে।
এর বাইরে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন রাস্তার পাশে পিঠার দোকানগুলো দেখেও বোঝা যাচ্ছে শীত এসেছে। ফুটপাতে চুলো জ্বালিয়ে পিঠা তৈরি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কবি আহসান হাবীব লিখেছিলেন, ‘শীতের পিঠা, শীতের পিঠা/ঝাল নোনতা বেজায় মিঠা/ পাটিসাপটা, চিতই ভাপা/মালাই ঠাসা কিংবা ফাঁপা/খেজুরের রসে হাবুডুবু/মাখছে খালা, ভাজছে বুবু।’ এসব পিঠার কয়েকটি তৈরি হচ্ছে ফুটপাতের দোকানে। একদিকে চুলো থেকে তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে চলছে ফু দিয়ে খাওয়া। টাঙ্গাইলের যে কোনো ব্যস্ত এলাকায় দেখা যাচ্ছে এমন দৃশ্য। এসব চেনা ছবিই পৌষ মাঘের শীতের কাছে নিয়ে যাবে। আপাতত সে অপেক্ষা।

 

 

 

৩৫ Views

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *