মধুপুর প্রতিনিধি ॥
এক সময়ে তুখোড় কাবাডি-হাডুডু খেলোয়াড়। টাঙ্গাইলের পাহাড়, নদী আর চরের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে হাটবাজারে দাপটে হাডুডু’র মাঠ কাঁপাতেন। দাঁপিয়ে বেড়াতেন ছোট্র রেখাটানা চৌহদ্দিতে। সতীর্থদের সাথে নিয়ে বুক ভরা অসীম সাহসে দম দিতেন। কখনও জয়, কখনও পরাজয়ের হাসি বেদনার পাহাড় বুকে নিয়ে ঘরে ফেরা। শিকল ছিড়ে ছুটে আসতেন দু:সাহসিক অভিযাত্রী হিসেবে। কপোকাত করে দিতো প্রতিপক্ষের ধমারুদের। শারীরিক কসরত যেন প্রাণস্ফুর্তিতে উচ্ছ্বল ছিল দেহ মনে। ফিটফাট গঠনকে সুঠাম রাখতে পরিমিত খাদ্যাভাস ও ব্যায়াম ছিল নিত্য সঙ্গী। ছিলেন পেশাদার একজন হাডুডু খেলোয়াড়। বলছিলাম উত্তর টাঙ্গাইলের পরিচিত আবার কারো প্রিয় শিক্ষক আব্দুল লতিফের কথা। যিনি শেকড় গড়েছেন মধুপুর গোপালপুর ধনবাড়ি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অসংখ্য ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক হিসেবে রয়েছে যেমন সুনাম যশ। তেমনি ক্রীড়া সংগঠন হিসেবে জেলার গন্ডি পেড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় তার পরিচিতি রয়েছে।
তার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি যেন আলোঘর। আলোর দ্যুতি ছড়িয়েছে কর্মকালীন সময়ে। সে আলোর দ্বীপ জ্বেলেছে স্থানে স্থানে। টুকরো টুকরো আলো দেশের বাইরেও ছুটে গেছে। জ্বলছে শুকতারার মতো। শিক্ষার্থীদের এমন সম্মান ভালোবাসা শ্রদ্ধায় আপ্লূত তিনি। এখনও খোঁজখবর নিতে বাদ রাখেন না ছাত্রদের । তার কর্মকালীন সময়ের কোন পুরানো শিক্ষার্থীকে কাছ পেলে আদি অন্ত খবর নিতে কান পেতে মন দুয়ার খুলে দেন। হারানোর দিনে স্মৃতির ফ্রেমে আটকে যান মানুষটি। এভাবে চলে তার নিত্য পথচলা। অবসরে এসেও থেমে যাননি পরিশ্রমী মানুষ গড়ার কারিগর। কয়েক বছর আগে অবসরে এসে এখন মধুপুরে তারার মেলার কিন্ডার গার্টেনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের ধনবাড়ির ক্যাফে হাটের স্পোর্টস লাভারস এসোসিয়েশন ক্রীড়া সংগঠন সাবেক কৃতি খেলোয়াড় হিসেবে তাকে সম্মাননা প্রদান করেছেন। এসোসিয়েশনের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ম্যারাথন, হাডুডু, রাশি টানাটানি, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদানের আয়োজন করা হয়।
সম্মাননা পেয়ে শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, এক সময় পেশাদার হাডুডু খেলোয়াড় ছিলেন। খেলতে যেতেন নিজের জেলা পেড়িয়ে আশপাশের জেলাগুলোতে। পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে তার তেজিভাব তাকে উৎসাহ যোগাতো। শিক্ষাকতা জীবনেও খেলাধুলা তাকে নেশার মতো টানতো। গোপালপুরে সূতি বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে গড়ে তুলেছিলেন বালক ও বালিকা ফুটবল দল। দল দুটোই জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। তার নিরলস কর্ম প্রচেষ্টায় গোপালপুরে নারী ফুটবলার কৃষ্ণারা গড়ে উঠে। কৃষ্ণা আজ দেশের জাতীয় দলের নারী ফুটবলার।
মানুষ গড়ার কারিগরটি শিক্ষা, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে এখন শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তার ইচ্ছে মধুপুরে গারো বালিকাদের নিয়ে একটি টিম গঠন করে দেশের মাঠ কাঁপানো। এ লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ করছেন বলে জানালেন তিনি। এতো ক্লান্তি আর শ্রমের মধ্য দিয়ে দিন কাটানোর পরও নেই কোন অভিযোগ। নেই আপসোস অনুসূচনা। আছে শুধু অদম্য প্রেরণা আগামী প্রজন্ম যেন গড়ে উঠে সুস্থ দেহে সুন্দর মনে।