স্টাফ রিপোর্টার ॥
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে গত বছর পর্যন্ত ১০১টি ইটভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানো হয়েছে। সরকারের অনুমোদন না নিয়েই এ বছর আবাদি জমিতে আরো সাতটি ইটভাটা নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে। ওই সব ভাটায়ও ইট তৈরি ও পোড়ানোর জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে পরিবেশ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স ছাড়াই ভাটা মালিকরা সাতটি নতুন ইটভাটা তৈরি করেছেন। অবৈধ ভাটাগুলো হলো- উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া গ্রামে আরবিসি ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকস, বাটা ব্রিকস, চান্দুলিয়া গ্রামে এইচইউবি ব্রিকস, গোড়াই ইউনিয়নের দেওহাটা মল্লিকপাড়া গ্রামে সনি ব্রিকস, দেওহাটা পাথালিয়াপাড়া গ্রামে বিঅ্যান্ডবি ব্রিকস, দেওহাটা ও বাইমহাটী গ্রামে রান ব্রিকস। প্রতিটি ইটভাটায় ১৪ থেকে ২০ একর আবাদি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে মির্জাপুর উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৮টি। এর মধ্যে কিছুসংখ্যক ভাটার লাইসেন্স থাকলেও বেশির ভাগ ভাটার নেই বৈধ কাগজপত্র। এর অনেক ভাটাতেই নেই ট্রেড লাইসেন্স, ডিসি অফিসের লাইসেন্স, কোনোটিতে নেই পরিবেশ ছাড়পত্র। এছাড়া বেশ কিছু ইটভাটা সংরক্ষিত বনের পাশে স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া কোনো কোনো ইটভাটা ফসলি জমিতে এবং বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে। বেশির ভাগ ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নবায়ন না হলেও থেমে নেই ইট পোড়ানো।
এসব ভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পাহাড়ি অঞ্চলের টিলা ও আবাদি জমির মাটি। পাহাড় কেটে সমতল ও আবাদি জমি করা হচ্ছে পুকুর। বুধবার (২৭ নভেম্বর) অবৈধ ওই সাত ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, ইট পোড়ানোর জন্য বিপুল পরিমাণ কাঠ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ভাটার কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হওয়া ছাড়াও কমছে আবাদি জমি, অন্যদিকে মাটি পরিবহনে নষ্ট হচ্ছে কাঁচা-পাকা রাস্তা। এক কথায় কোনো আইন মানছেন না ভাটা মালিকরা।
গত (৬ নভেম্বর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মির্জাপুরে একটি প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে সেসময় তিনি বলেছিলেন, নতুন করে ইটভাটা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ সংযোগ বৈধও হয় আবার অবৈধও হয়। হোল্ডিং নম্বর না থাকলে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার সুযোগও নেই। এখানেও অভিযান চালানোর আশ্বাস দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হয়েছে।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জিএম শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, খুঁটি ও ট্রান্সফরমার স্থাপনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মির্জাপুর অফিসে জমা থাকে। অবৈধ ইটভাটায় সংযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মির্জাপুরে আইন মানছেন না ইটভাটার মালিকরা
৪০ Views