স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের পাহাড়ি লাল মাটিতে মসলা জাতীয় ফল আলু বোখারা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে। শৌখিন কৃষকরা পারিবারিক বাগানে পরীক্ষামূলক আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়ার দাবি করেছেন। কিন্তু প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ সংকটে এর বাণিজ্যিক আবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে না। আলু বোখারা পাম জাতীয় ফসল।
অনেকের মতে এর মাতৃভূমি মধ্য এশিয়া। পারস্যের শাহানশারা রাজকীয় খাবারের উপাদান হিসেবে এর ব্যবহার করতেন। টেপারেট এবং ইউরোপিয়ান জাত ছাড়াও আমাদের দেশে বারী-১ জাতের আলু বোখারার চাষ হচ্ছে। ফরিদপুরের মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সারি, কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়ার মহাস্থানগড়ের সবুজ নার্সারি, মধুপুরের সুমি নার্সারিসহ অন্তত ১৭টি কেন্দ্রে আলু বোখারার কলমচারা মেলে। কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এক গবেষণা থেকে জানান, চারা লাগানোর তিন বছর পর হতেই গাছে ফল ধরে। পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, সালাদ, বোরহানি তৈরিতে আলু বোখারা কাজে লাগে। জ্যাম, জ্যালি, আচারসহ নানা মুখরোচক খাবার বানানো যায়। নিরেট পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও গড় এলাকায় বাণিজ্যিক আবাদ লাভজনক হবে বলে জানানো হয়।
কৃষি বাতায়নের এক তথ্যে দেখা যায়, দেশে প্রতি বছর আলু বোখারার চাহিদা বাড়ছে। বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যেখানে ৯৫৬ টন আলু বোখারা মামদানি করা হয়। সেখানে ২০২২- ২৩ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ আড়াই হাজার আমদানি বাড়লেও নেই বাণিজ্যিক আবাদ।
অবসরপ্রাপ্ত কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন জানান, এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। প্রচুর পটাসিয়াম, ফ্লোরাইড ও লৌহ রয়েছে। ডায়াবেটিক রোগীর জন্য দারুণ উপকারী। ছাদ বাগানেও এর চায় সম্ভব এবং অনেকেই এটি করে পারিবারিক পুষ্টি মিটাচ্ছে। মুক্তাগাছার রাজঘাটের বনলতা নার্সারির শওকত আলী জানান, তিনি গতবার উৎপাদন করা কয়েক মণ আলুবোখারার বাজারজাতকরণ নিয়ে ঝামেলায় পড়েন। মধুপুর উপজেলার মহিষমারা গ্রামের বাসিন্দা, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক সানোয়ার হোসেন জানান, তিনি দুই বছর আগে ৫০০ চারার একটি বাগান করেন। কিন্তু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ সমস্যায় লোকসান হয়।
ফল চাষে আরেক বাণিজ্যিক খামারি মধুপুর উপজেলার ভবানীটিকি গ্রামের হালিম মিয়া জানান, তার বাগানে একটি গাছ থেকে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ কেজি আলু বোখারা পান। এসব নিজে খান এবং পাড়াপড়শির মধ্যে বিতরণ করেন। একইভাবে হলুদিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং মধুপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মনিরল ইসলাম একটি গাছ থেকে এবার ১৫ কেজি আলু বোখারা সংগ্রহ করেছেন। সুমি নার্সারির মালিক উমর শরীফ জানান, তার বাগান থেকে প্রতি বছর শত শত কলম চারা বিক্রি হয়। মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়ি এলাকার বহু শৌখিন বাগানবিদ পারিবারিককভাবে লাগানো গাছ থেকে প্রচুর আলু বোখারা উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু বাজারজাতকরণ ও প্রত্রিয়াজাতকরণ সংকটে কেউ বাণিজ্যিক খামার করছেন না।
মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিসার সাকুরা নাম্মী জানান, আলুবোখারা চাষে কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয় না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে পারিবারিক বাগানে অনেকেই আবাদ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন।
বারি মসলা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, বিগত ২০১৩ সালে বারি আলু বোখারা-১ জাত অবমুক্ত করা হয়। প্রতি গাছ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ কেজি ফলন পাওয়া সম্ভব হয়। এক শতাংশ জমিতে চারটি চারা লাগানো যায়। রোগবালাই নেই বললেই চলে। টানা ১৫-২০ বছর গাছ থেকে ফলন পাওয়া সম্ভব।