কাজল আর্য ॥
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নগরবাড়ী সাব পোস্ট অফিসের একেবারে বেহাল দশা। প্রায় দুই যুগ ধরে ভগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকলেও হয়নি কোন উন্নয়ন। ফলে জরাজীর্ন অফিস কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে চলছে সব কার্যক্রম। এছাড়া ঘাটাইল উপজেলার লোহানী সাগরদিঘী সাব পোস্ট অফিসেরও একই অবস্থা। এতে এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। টাঙ্গাইলের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল বলেছেন, আমরা বারবার জানালেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আর্থিক অনুমোদন না করায় এগুলোর সংস্কার কাজ হচ্ছে না।
সরেজমিনে জানা যায়, বিগত ১৯৪০ সালে কালিহাতী উপজেলার নগরবাড়ী সাব পোস্ট অফিসটি স্থাপিত হয়। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা নারান্দিয়ার ইউনিয়নের প্রাক্তন পঞ্চায়েত ক্ষিতিশ চন্দ্র বসুর বংশধররা এ পোষ্ট অফিসের জন্য ২৭ শতাংশ জমি দান করেন। পোস্ট অফিস সংলগ্ন ছিল স্থানীয় বাজার। একসময় এ পোস্ট অফিসে রমরমা সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হতো। বর্তমানে দীর্ঘ ২ যুগ ধরে পোস্ট অফিসটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। অফিস কক্ষটি একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ছাদ ফেটে বৃষ্টির পানি ভেতরে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্ট। দেয়াল ও ছাদের প্লাস্টার-ইট খসে খসে পড়ছে। পিলার ফেটে রড বের হয়ে কক্ষটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় বখাটেরা নির্জন স্থান পেয়ে নিয়মিত আড্ডা ও মাদক সেবন করে। কয়েকবছর আগে এ পোস্ট অফিসটিতে তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে। পরে থানায় জিডি করা হয়। সব মিলিয়ে এখানে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ পোষ্ট অফিসে ছিল বাউন্ডারি ওয়াল, টিউবওয়েল, পোষ্ট মাস্টারের থাকার-রান্নার ঘর সবই। পরে সেগুলো বিক্রির টাকারও কোন হদিস নেই।
স্থানীয় গুপিনাথ মোদক, জয়দেব মোদক, জুলহাস উদ্দিন, মহাদেব সরকার, রমনসহ অনেকে বলেন, সারাদেশেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু বহু বছর ধরে এ পোস্ট অফিসের ভয়াবহ অবস্থা। মনে হয় দেখার কেউই নেই। আমরা এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষের কাছে পোস্ট অফিসের সুন্দর একটি ভবনসহ সার্বিক উন্নয়নের দাবি করছি।
নগরবাড়ী সাব পোস্ট অফিসের মাস্টার আমিনুল ইসলাম বলেন, এ পোস্ট অফিসটি অনেক পুরাতন এবং এর ৫টি শাখা অফিস রয়েছে। আমরা চিঠিপত্র ও পার্সেল আদান প্রদান, ডাক জীবন বীমা ও ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের সেবা দিয়ে থাকি। এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, টিউবওয়েল নেই, পোস্ট মাস্টারের বাসস্থান নেই। আতংকে থাকি কখন যেনো মাথার উপর ছাদ ভেঙে পড়ে। এ অবস্থা বহু বছর ধরে। কি যে কষ্টে চাকরি করি সেটা বোঝাতে পারবো না।
এদিকে ঘাটাইল উপজেলার লোহানী সাগরদিঘী সাব পোস্ট অফিসের মাস্টার মোবারক আলী মিয়া বলেন, পলিথিনের কাগজ টাঙিয়েও অফিস করতে হয়। অফিসের ইট খসে পড়েছে। বৃষ্টি পড়লে মাথায় ছাতা দিয়ে কাজ করি। আমাদের ৭টি শাখা অফিস রয়েছে। উন্নয়নের জন্য চিঠি দিয়েছি। এমন পরিবেশে কি চাকরি করা যায়? সেবা প্রার্থীরাও এসে কষ্টের শিকার হন।
টাঙ্গাইলের ডেপুটি পোস্ট অফিসের মাস্টার জেনারেল (ডিপিএমজি) মোরশেদ আলম বলেন, জেলার মধ্যে নগরবাড়ী এবং লোহানী সাগরদিঘী সাব পোস্ট অফিস দুটির অবস্থা একেবারে ভয়াবহ। আমি পরিদর্শন করেছি। এখানে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করাই দূরহ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর উন্নয়নের জন্য আমরা ঢাকায় ডিজি অফিসে বারবার লিখিত আকারে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সার্কেল ঢাকার পোষ্ট মাস্টার জেনারেল ফরিদ আহমেদ বলেন, টাঙ্গাইলের দুই উপজেলার দুটি সাব পোষ্ট অফিস অনেক দিন ধরে বেহাল অবস্থায় আছে। পোস্ট অফিস পুণ:নির্মাণ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।