স্টাফ রিপোর্টার ॥
যমুনা নদীর ওপর উত্তরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্প ও দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু পথে কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা নিয়েই এখন মূলত সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, আগ্রহও বাড়ছে। রেল সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, সেতুর শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষ। আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম ভাগে উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। উদ্বোধনের পরই উত্তরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তবে প্রকল্প থেকে রেল ব্রিজের ‘মিউজিয়াম’ নির্মাণ কাজ বাদ দেওয়ায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে বাংলাদেশ রেলপথের।
প্রমত্ত যমুনা নদীর গভীরতা ও স্রোতের সঙ্গে যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ভৌত অবকাঠামোর কঠিনতম কাজ নদীর তলদেশে ৫০টি পাইল বা পিলার স্থাপন করার মধ্য দিয়ে রেলসেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শুরু হয় বিগত ২০২০ সালে। পিলারের ওপর স্থাপন করা হয় পিয়ার। আর এই পিয়ারের ওপর সুপার স্ট্রাকচার ৪৯টি স্প্যান স্থাপনের পর চার দশমিক আট কিমি দীর্ঘ সেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এটি হবে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মেলবন্ধন। রেলসেতুটি দিয়ে আন্তঃ দেশীয় যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে পারবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথেও পণ্য পরিবহন সহজতর হবে এবং খরচও সাশ্রয় হবে। উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্প অনন্য বৈশিষ্ট্যের স্বপ্নের এই রেলসেতুর ওপর দিয়ে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। এই রেল লাইনে কোনো স্লিপার থাকছে না। শুধু স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মরিচারোধী রেললাইন বসানো হয়েছে। ৪ দশমিক আট কি.মি. সেতুর ওপর বসানো হয়েছে ৪৯টি স্প্যান। তবে মেগা প্রকল্প থেকে ব্রিজের মিউজিয়াম নির্মাণের অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। মিউজিয়াম নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পের এই টাকা সাশ্রয় হবে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন। সেতুর ওপর দিয়ে পূর্ণ গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে কিনা এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক জানান, ট্রেন চলাচলে পূর্ণ মাত্রা গতির কোনো হেরফের হবে না। প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, সেতুটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে সময় সাশ্রয়। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বর্তমান সড়ক সেতুটি ট্রেন চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একটি ট্রেন পার হতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় নেয়। রেল সেতু দিয়ে যদি ঘন্টায় একশ’ কিলোমিটার বেগেও ট্রেন চলে, তাহলে মাত্র ৫ মিনিটে যমুনা নদী পার হওয়া যাবে। তবে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন ১২০ কি.মি. গতিতেই চলবে। এতে প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে বলেও তিনি যোগ করেন। প্রকল্প পরিচালক আরও বলেছেন, ভারত থেকে প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে জটিলতার কারণে সেতুর দুই পাশের স্টেশনে শুরু থেকে কম্পিউটার ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। স্টেশনে যেহেতু প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ওঠা-নামার জন্য দাঁড়াবে। তাই কম্পিউটার ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) কোনো অন্তরায় হবে না। তবে সেতু চালু হওয়ার ঠিক দুই মাসের মধ্যে সেতুর দু’পাশের স্টেশনে সিবিআইএস সংযুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
রেল মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, রেলসেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ও রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রান্স এশিয়ান রেলপথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের সেতু নির্মাণ কাজ বিগত ২০২০ সালের (২৯ নভেম্বর) উদ্বোধন করা হয়। ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে ৭২ ভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
রেল মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সারাদেশের রেলযোগাযোগ ও রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রান্সএশিয়ান রেলপথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের সেতু নির্মাণ কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। বিগত ২০২০ সালের (২৯ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে ৭২ ভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। দেশ-বিদেশের সাত হাজারেরও বেশি শ্রমিক আর প্রকৌশলীরা এই প্রকল্পে কাজ করেছেন।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এই সেতু চালুর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ খাতে সড়কপথের পাশাপাশি রেল যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন হবে, খুলে যাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অপার সম্ভাবনার দুয়ার।