স্টাফ রিপোর্টার ॥
টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে শীতকালীন সবজি চাষ করেছে কৃষকরা। এ সময়ে মাঠে মাঠে বাহারি সবজি যেন চোখ জুড়ানো। হতদরিদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা স্বপ্ন বুনছেন শীতকালীন সবজি চাষে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা চাষ করেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, শিম, বেগুন, লাউসহ বিভিন্ন শাকসবজি। মাঠে এখন কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছে। সেচ, সার, নিড়ানিসহ নানা পরিচর্যায় সময় কাটাচ্ছেন। সকালে শিশির ভেজা থেকে কচি রোদের মধ্যে সবুজ খেত খামারে স্বপ্ন বুনছে তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের আশা করছে তারা। আর কৃষি বিভাগ বলছে এ অঞ্চলের মাটি আবহাওয়া ভূপ্রকৃতি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় সবজির ক্রেতার কোন অভাব নেই। ফলন ও সার আলো পেয়ে থাকে। এলাকার সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। এজন্য চলতি বছরও ফলন ভালো পাবেন বলে আশা করছেন চাষীরা।
মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি অর্থ বছরে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে। ফুল কপি ৫৫ হেক্টর, বাঁধাকপি ৭২ হেক্টর, লাউ ১৭৬৫ হেক্টর, শিম ৮৪ হেক্টর, আলু ১৯২২ হেক্টর, পেয়াজ ৩৫ হেক্টর ও করলা ৪২ হেক্টরসহ বিভিন্ন শাক সবজি চাষ করা হয়েছে। সরেজমিনে মধুপুরের শালিখা, পিরোজপুর, চাপাইদ, কুড়াগাছা ও ধরটি গ্রামে দিয়ে জানা যায়, এদের শীতকালীন সবজি চাষের সফলতার নানা কথা। হুড়াগায়া, পিরোজপুর, শালিখাসহ কয়েকটি গ্রাম সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। প্রচুর পরিমাণে সবজি চাষ করেছে কৃষকরা। সবজি চাষকে ঘিরে এসব গ্রামের আর্থিক চাঁকা আর্বতিত হয়ে থাকে। সারা বছর তারা বিভিন্ন মৌসুমী কৃষি ফসল চাষ করে থাকে।
শালিখা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে খন্ড খন্ড সবজির জমি। নারী-পুরুষ মিলেমিশে কাজ করছে সবজি খেতে। সবুজ সবজিতে সেজেছে পুরো মাঠ। কপি খেতে ফুল আসতে শুরু করেছে। বাঁধা কপি, আলু জাতের সবজি বিক্রি শুরু করেছে। তারা জানলেন, তাদের গ্রামের কৃষকরা দীর্ঘ দিনযাবত সবজি চাষ করে করছে। কেউ নিজের জমি, কেউ বর্গা, কেউ বা ভোগরেহান বা লিজ নিয়ে চাষ করছে। গ্রামের সবজি গুণেমানে ভালো থাকার কারণে ক্রেতার কোন অভাব হয় না। চাষী ওবায়দুল হক (৪৭) জানান, সে এ বছর ২০ শতাংশ আলু, ১৫ শতাংশ ফুলকপি, ১০ শতাংশ বাঁধাকপি ও ৫ শতাংশ মুলা চাষ করেছে। তার পরিবারে খাওয়ার পর প্রতি বছর সবজি ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন। মিরাজ মিয়া (২৮) জানান, শীতকালীন সবজি ৩০ শতাংশ কপি, ৪০ শতাংশ শিম ও বেগুণ চাষ করেছেন। গোবর, সার ও রাসায়নিক সার পরিমিত দিয়ে চাষ করেছেন। চাষের খরচ শেষে ভালো লাভ পাবেন এমন আশায় বাগানে পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। আকবর আলী (৫০), ইউনুছ আলী (২৮) সহ আরো অনেক কৃষকরা সবজি চাষ করেছেন। তারা জানালেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ পেয়ে তারা মৌসুমে বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। তাদের মতে, সারের দাম বেশি। শ্রমিক মজুরি, বিষ, চাষাবাদ করে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তারপরও সবজি চাষে এগিয়ে যাচ্ছেন। লাভবান হওয়ার আশা দেখছেন তারা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, এ অঞ্চলের বেলে, দোখাঁশ মাটি সবজি চাষের জন্য উপযোগি। কৃষকদেরকে সবজিসহ বিভিন্ন চাষে প্রশিক্ষণসহ সহযোগিতা ও পরামর্শ করা হয়ে থাকে। এ বছর মৌসুমের শেষ সময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ে ধানের কিছু ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকরা সবজির মাঠে শ্রম দিচ্ছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে সবজির দাম ভালো পাবেন এমনটাই জানান তিনি। তার মতে, এ গ্রামের উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। সবজির গুণগত মান ভালো থাকার কারণে ক্রেতারও কোন অভাব হয় না। ভালো দাম পেয়ে থাকে কৃষকরা।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা জানান, মধুপুর উপজেলায় প্রচুর পরিমানে শীতকালীন সবজি চাষ হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের মাটি আবহাওয়া প্রকৃতি সবজি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। সবজির গুণগত মান ভাল থাকায় ক্রেতার কোনও অভাব হয় না। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা সবজি চাষে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানকার সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ তাদেরকে নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকে।