হাসান সিকদার ॥
অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা নির্মাণ করার ফলে ও পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে টাঙ্গাইলের বাসাইলে কৃষি জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলবদ্ধতা। জলবদ্ধতার কারণে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে সরিষা চাষ ব্যাহত হয়েছে। শঙ্কায় রয়েছে বোরো মৌসুমের আবাদও। প্রায় দুই হাজার একর জমিতে আড়াই হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৭৮০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়।
জানা যায়, বাসাইল পৌরসভার আন্দিরা পাড়া এলাকায় একটি কালভার্ট ছিল। দীর্ঘ দিন পানি না হওয়াতে গত বছর এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। গত বছর নতুন রাস্তা করা হয়। কালভার্টটি থাকলে পানির প্রবল স্রোতে নতুন রাস্তা ভেঙে যাবে এ কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় কালভার্টটি। এছাড়াও আন্দিরাপাড়া থেকে কোম্পানি বাড়ি পর্যন্ত গত বছর অপরিকল্পিত ভাবে রাস্তা নির্মাণ করার ফলে এই জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষাকালে যে পানি ঢুকেছে সেই পানি বের না হওয়ার কারণে ও কালভার্ট না থাকায় এই জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা। প্রায় দুই হাজার একর জমিতে ধানের বীজতলা ও সরিষা আবাদ করতে পারে নাই চাষিরা। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে যদি পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে বোরো আবাদেরও শস্কা রয়েছে। এতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাসাইল উপজেলা সদরের এসআর পাড়া, আন্দিরা পাড়া, পাল পাড়া, মাঝি পাড়া ও বালিনাসহ বেশ কিছু জলাবদ্ধতার কারণে এবার সরিষার আবাদ করতে পারেনি কৃষকরা। বোরো ধানের বীজতলাও তৈরি করতে পারেনি। সামনে বোরো আবাদেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের দাবি দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। ফসলি মাঠে আবাদের ব্যবস্থা না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে এলাকার প্রায় এক হাজার কৃষক। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কোন পদক্ষেপ নেয়া। তা না হলে এসব কৃষকদের না খেয়ে মরতে হবে।
কৃষক ফজল মিয়া বলেন, অপরিকল্পিতভাবে চারিদিকে রাস্তা করে ব্রীজ কালভার্ট বন্ধ করে দিয়ে এই এলাকার হাজার একর জমি রবি শস্য থেকে বঞ্চিত। বীজতলা কেউ করতে পারতেছে না। বীজতলার মধ্যে হাটু পানি। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা রাখে নাই। যেগুলো ছিল সেগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। পানি নিস্কাশনের জন্য সুব্যবস্থা করার দাবি জানাই। আন্দিরা পাড়া এলাকার কৃষক বলরাম রাজবংশী বলেন, আমরা সরিষা আবাদ করতে পারি নাই। তিন ফসলি জমি সবসময় তিন ফসল উৎপাদন করে থাকি। জলবদ্ধতার কারণে আমরা আবাদ করতে পারতেছি না। বীজতলায় হাটু পানি। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না করলে বোরো আবাদ নিয়েও শঙ্কা রয়েছি। আমন ধান, সরিষা ও বোরো ধান আবাদ করে আমাদের সংসার চলে। এ আবাদের উপর আমাদের সংসার নির্ভরশীল। সরকার কোন ব্যবস্থা না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। সরকার দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করলে আমরা ধান রোপন করতে পারবো। ধান রোপনের ব্যবস্থা করে দিয়ে সরকার আমাদের রক্ষা করবে। এটাই আমাদের দাবি। সুব্রত রাজবংশী বলেন, এলাকার বেশিরভাগ মানুষের আয়ের উৎস হচ্ছে চাষাবাদ। তারা চাষাবাদ করে সংসার চালান। দীর্ঘ ধরে পানি আটকা পড়ে আছে। তাদের চাষাবাদে ব্যাঘাত ঘটতেছে সেজন্য তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এখানে একটি কালভার্ট বা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারবে। না হলে তাদের মৌসুমী ফসলসহ আমন ধান, সরিষা ও বোরো ধান আবাদ করতে পারবে না। তখন কৃষকদের না খেয়ে মরতে হবে।
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা কৃষি অফিসার শাহজাহান আলী বলেন, আন্দিরা পাড়া এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে এবছর চাষের আওতায় আসেনি। উপজেলা কৃষি বিভাগ ওই সমস্ত এলাকায় চাষের আওতায় আনার জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার জন্য এই পৌরসভায় প্রায় ৮৩০ জন কৃষককে সরিষার বীজ প্রণোদনা পূর্নবাসন হিসেবে প্রদান করেছেন। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যেন বোরো আবাদে ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠতে পারে প্রায় ২৫০ জন কৃষককে হাইব্রিড বীজ সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরুখ খান বলেন, আমি ইতিমধ্যে জলাবদ্ধতা সম্পর্কে অবহিত। এলাকাবাসী আমার কাছে এসেছিলেন। তারা লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। জলবদ্ধতা বাসাইলের দীর্ঘ দিনের সমস্যা। রাস্তাসহ অন্যান্য অবকাঠামো হওয়ার কারণে জলবদ্ধতা সমস্যা প্রকট হচ্ছে। কৃষিসহ অন্যান্য কাজে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। পৌরসভার প্রকৌশলী সরেজমিনে গিয়েছিল জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। অস্থায়ী কোন কিছু করলে রাস্তাটির ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে আমরা বর্তমান অর্থ বছরে এডিপির যে প্রকল্প এখান থেকে স্থায়ী কোন কিছু করার যাতে রাস্তারও ক্ষতি হবে না। জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। বক্স কালভার্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। জলবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখবে আশা করছি।