সোহেল রানা, কালিহাতী ॥
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদুরে ও প্রাণী সম্পদ অফিসের সামনে নিজের ফার্মেসীতে বসে দীর্ঘদিন যাবত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে প্রেসক্রিপশন করে আসার অভিযোগ ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র করের বিরুদ্ধে। একটা সময় তিনি নিজেই ছিলেন দীর্ঘদিনের চর্মরোগের রুগী। অন্যদিকে তিনি দ্বিতীয়বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে দুইবারই হয়েছেন অকৃতকার্য। এরপর আর পরীক্ষাই দেননি তিনি। অথচ তিনিই এখন প্রেসক্রিপশন করছেন ডাক্তার পরিচয় দিয়ে।
প্রশ্ন উঠেছে কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সময়মতো উপস্থিত না থাকায় ও রোগিদের প্রতি সময় না দেয়ায় এই ভুয়া চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন রোগীরা। প্রতিদিন শতাধিক রোগীর সাথে প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদ না করতে বাঁধা দেয়া হয়। ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর নিজের দোষ স্বীকার করলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে নেয়া হবে ব্যবস্থা। তবে দায় দেখছেন না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালিহাতীর পৌর শহরের পশু হাসপাতালের সামনে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজের রানা ফার্মেসীতে বসে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রেসক্রিপশন করে আসছেন ভবেশ চন্দ কর নামের এক ভুয়া চিকিৎসক। আগে প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লিখলেও সম্প্রতি ডাক্তার লেখা বন্ধ করেছেন তিনি। তবে প্রেসক্রিপশনে তার নাম ও পদবি এমনভাবে লিখেছেন দেখে মনে হয় হুবহু এমবিবিএস ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন। প্রতিদিন এভাবে শতাধিক রুগি দেখেন। রুগিদের কাছ থেকে সরাসরি ভিজিট না নিলেও ওষুধের দামের সাথে ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভিজিট নিয়ে থাকেন ভবেশ চন্দ্র কর।
চিকিৎসা নিতে আসা আসমা খাতুন জানান, রানা ফার্মেসীতে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ার পর চর্মরোগ কিছুটা কম ছিল। এর কয়েকদিন পর আরো বেড়েছে। আজ আবার ডাক্তার দেখাতে এসেছি। ভবেশ চন্দ্র কর ডাক্তার না এটা জানেন কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে আসমা খাতুন বলেন, ডাক্তার না হলে ফার্মেসীতে বসে রোগী দেখেন কিভাবে। ভিজিটও নিচ্ছেন। উপজেলা পরিষদ এখানে, পাশে সরকারি হাসপাতাল এতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে রোগী দেখছে তাহলে প্রশাসন কি করে এমন প্রশ্ন তার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রেসক্রিপশন না করার কথা বললেও এখনো প্রতিদিন আগের মতোই প্রেসক্রিপশন করে রোগী দেখছেন কতিথ ভূয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক দোকানদারসহ স্থানীয়রা জানান, মধুপুরের জলছত্র হাসপাতালে চাকরি করা অবস্থায় ফার্মেসী খুলে। তখন থেকে মানুষের সাথে এভাবেই প্রতারণা করে আসছে ভবেশ চন্দ্র কর। প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক রোগী দেখেন। ভবেশের আরেকটি প্রতারণার অভিযোগ হচ্ছে- ওষুধের দামের সাথে যোগ করে ভিজিট নিয়ে থাকেন তার কর্মচারীর মাধ্যমে। কার কাছ থেকে কত টাকা ভিজিট নেয় তাও বলে না। কিছুদিন আগে এক রোগীর কাছ থেকে ওষুধের দামের থেকে প্রায় সাড়ে ৫শ’ টাকা বেশি নিয়েছে। ওই রোগী অন্য জায়গা থেকে ওষুধের দাম যাচাই করে এসে ভবেশের সাথে তর্কে জড়ায়। পরে সে ১০০ টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দেন। কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত চর্মরোগের ডাক্তার না থাকায় রোগীরা ভবেশ চন্দ্র করের কাছে ভীড় জমায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের উপস্থিতি থাকলে মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসতো না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কতিথ চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর জানান, একসময় সে নিজেই ছিলেন চর্মরোগের রোগী। মধুপুরের জলছত্র হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় ডাক্তারদের সাথে তার সম্পর্ক তৈরী হয়। পরে ডাক্তারের সহকারীর চাকরি নেন। ডাক্তারের সাথে থাকার সুবাদে চিকিৎসা দিতে শিখেছেন তিনি। পরে ফার্মেসী খুলে কর্মচারী রেখেছেন। সময় পেলে এসে রোগী দেখতেন। এভাবেই চলছে কয়েক যুগ ধরে। তিনি আরও জানান, মাঝে দুইবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে পাস করতে পারেননি। পরে আর পরীক্ষা দেননি। জলছত্র হাসপাতাল থেকে অবসরের পর ৬ মাস একটি ক্লিনিকে ম্যানেজারের চাকরি করেছেন। এরপর থেকে ফার্মেসীতে বসেই রোগী দেখেন।
প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লেখার বিষয়টি অস্বীকার করে ভবেশ চন্দ্র কর জানান, প্রেসক্রিপশনগুলো ওষুধ কোম্পানীর লোকেরা দিয়ে থাকে। তারা ভুল করে দিয়েছিলো। পরে তা ফেরত দিয়েছি। রোগীদের কাছ থেকে ১০০টাকা করে ভিজিট নেন জানিয়ে তার ভুল স্বীকার করে আর কখনো প্রেসক্রিপশন করবেন না বলে জানান কথিত চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাহাত হোসেন জানান, চিকিৎসক না হলে কারো প্রেসক্রিপশন করার অনুমতি নেই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।