সাদ্দাম ইমন ॥
শীতে টাঙ্গাইল জেলায় লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা। শীত নিবারণের জন্য লেপ তোষক বানাতে ক্রেতারাও ভিড় করছে দোকানগুলোতে। অনেকেই আবার ব্যস্ত নিজের পুরনো লেপ-তোষক মেরামতে।
টাঙ্গাইল শহরের তুলাপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী ও কারিগররা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের শীতে লেপ-তোষকের চাহিদা কম। তাছাড়াও এই অঞ্চলে এখনো ধান কাটা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তাই গ্রামাঞ্চল থেকে লেপ-তোষকের চাহিদা তেমন আসছে না। তবে শীত বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়তে পারে এমনটাই আশা করছেন ব্যবাসায়ীরা। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। তবে বাংলাদেশে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি দিক থেকেই শীতের আগমনী বার্তা শুরু হয়। তাই শীত মোকাবিলায় প্রস্ততি হিসাবে ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী লেপ-তোষক তৈরি করে দোকানে মজুদ করে রেখেছেন। টাঙ্গাইল জেলা, উপজেলা ও পৌর শহরের বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শীতের জন্য লেপ-তোষক বানাতে দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। কারিগররাও এসব তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর একটি লেপ তৈরি করতে ৮শ’ টাকা থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। তোষক বানাতে খরচ পড়ছে ১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে একটি লেপ বা তোষক তৈরিতে একজন কারিগর ১৫০ টাকা করে মজুরি পান।
টাঙ্গাইল পৌর শহরের সোহেল ম্যাট্রেসের কারিগর লিটন সাহা বলেন, একটি লেপ বা তোষক তৈরিতে একজন কারিগরের সময় লাগে ১ ঘণ্টা। এভাবে একজন কারিগর দিনে ৮ থেকে ১০টি লেপ বা তোষক তৈরির কাজ করে থাকেন। পৌর শহরের সিরাজ বেডিং স্টোরের মালিক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, শীত মৌসুমে তিন মাস কারিগররা যে হারে লেপ-তোষক তৈরির কাজ পান বছরের বাকি সময় তাদের এই কাজ থাকে না। তখন তারা অন্য পেশায় নিয়োজিত হন। এ বছর কাজের চাহিদা কম থাকায় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কারিগরদেরও উপার্জন কমে গেছে। তবে শীত বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়তে পারে।
এদিকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলাটি যমুনা নদী তীরবর্তী হওয়ায় ঘন কুয়াশাসহ শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। গত কয়েকদিন ধরে দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। আর শীতের আগমনে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের কারিগররা। শীত মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি হিসাবে লেপ-তোষক বানানোর হিড়িক পরেছে দোকানগুলোতে।
কারিগররা বলছেন, কিছুদিন পরে ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে। ক্রেতাদের এই আনাগোনা চলবে পুরো শীত জুড়ে। আমরা কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিরাম বিহীনভাবে লেপ তোষক তৈরি করছি। শীতের ছয় মাস আমরা ব্যস্ত সময় পার করি। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, লেপ তোষক তৈরির কারিগররা অনেক ব্যস্ত সময় পার করছে। গোবিন্দাসী বাজারের লেপ-তোষক ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ জানান, এ বছর জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই লেপ-তোষক তৈরিতে খরচ একশ থেকে দুইশ টাকা বেড়ে গেছে। আর একটি লেপ-তোষক বিক্রি করে তাদের ২'শ থেকে ৩'শ টাকা লাভ হয়।
এদিকে, শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে শীত নিবারণের উপকরণ লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা। কারণ প্রতিটি এলাকাতেই শীত জেকে বসার আগেই শীত নিবারণে ওই সব লেপ-তোষক তৈরির দোকানে ভিড় করছে এ অঞ্চলের মানুষ। শীতের কারণে অনেকে শীত নিবারণের জন্য হালকা কাঁথা ও কম্বল ব্যবহার শুরু করছেন। ব্যবসায়ী হুরমুজ আলী জানায়, শীতের আগমনীর সাথে ভূঞাপুরের বিভিন্ন লেপ-তোষক কারিগর ও ব্যবসায়ীদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার ছোট-বড় হাটবাজার গুলোতে জাজিম, বালিশ, লেপ, তোষক তৈরি ও বিক্রির কাজে কারিগর ও ব্যবসায়ীরা নিয়োজিত। কাপড়ের মান বুঝে লেপ-তোষকের দাম নির্ধারণ করা হয়। ৪-৫ হাত লেপের দাম পড়ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। আর তোশক তৈরিতে দাম পড়ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।
তবে কেউ কেউ বলছেন, এবার তুলার দাম বেশি। কালার তুলা প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিশালী তুলা ৪০ টাকা, সিম্পল তুলা ৫০ টাকা, শিমুল তুলা ৩৫০ টাকা ও সাদা তুলা ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শীতের তীব্রতা বাড়লে লেপ-তোষক তৈরি ও বিক্রি আরও বাড়বে এমনটি প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।